বিচারক হতে চান লিমন
বিচারক হতে চান র্যাবের গুলিতে পা হারানো সাভার গণবিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র লিমন হোসেন। আজ মঙ্গলবার সকালে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ ইচ্ছার কথা জানান।
২০১১ সালের ২৩ মার্চ র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আহত হয়েছিলেন ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়ার তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে লিমন। সে সময় তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিলেন। গুলিতে গুরুতর আহত লিমনকে বাঁচাতে তাঁর এক পা কাটতে বাধ্য হয়েছিলেন চিকিৎসকরা।
২০১৩ সালে সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন লিমন। বর্তমানে তিনি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন।
নিজের ইচ্ছা প্রসঙ্গে লিমন বলেন, ‘পা হারানোর চার বছর পরও ন্যায়বিচার পাইনি। এ আক্ষেপ থেকেই আইন বিষয়ে লেখাপড়া করছি।’ এ সময় লেখাপড়া শেষ করে বিচারক পদে আসীন হতে চান বলেও জানান তিনি।
লিমন বলেন, সম্প্রতি ল সোসাইটি অব ওয়েলসের পরিচালনায় ইংল্যান্ড ছাত্র ইউনিয়ন আয়োজিত ‘মানবাধিকার ও বাংলাদেশের বর্তমান চলমান অবস্থা’ বিষয়ক সেমিনারে যোগ দেওয়ার নিমন্ত্রণ পান তিনি। ১১ মার্চ তাঁর লন্ডনে যাওয়ার কথাও ছিল। কিন্তু ভিসা না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত লন্ডনে যাওয়া হয়নি তাঁর।
কথা বলতে বলতে নিজের পা হারানো নিয়ে আক্ষেপ করেন লিমন। তিনি বলেন, ‘আমি লেখাপড়ার খরচ চালানোর জন্য ইটভাটায় কাজ করছি। মানুষের কাছ থেকে জামাকাপড় চেয়ে নিয়ে কলেজে যাই। র্যাব কোনো কথা না শুনেই আমার পায়ে গুলি করে বলল, তুই সন্ত্রাসী।’
‘সেদিন মাঠ থেকে গরু আনতে বাড়ির বাইরে যাই। পথে শহীদ জমাদ্দারের বাড়ির সামনে র্যাব-৮-এর একটি দল আমাকে সামনে পেয়ে শার্টের কলার ধরে নাম জিজ্ঞেস করে। নিজেকে ছাত্র বলে পরিচয় দিলে র্যাবের এক সদস্য কোনো কথা ছাড়াই আমার বাঁ পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে। পরে সেখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই,’ যোগ করেন লিমন।
ওই ঘটনার পর লিমনকে সন্ত্রাসী হিসেবে উল্লেখ করে অস্ত্র আইনে এবং সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দুটি মামলা করে র্যাব। তবে ঘটনাটি গণমাধ্যমে এলে দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো র্যাবের সমালোচনা করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানায়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও লিমনের পক্ষে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়।