বিয়ে করলেন র্যাবের গুলিতে পা হারানো সেই লিমন
র্যাবের গুলিতে এক পা হারানো ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামের সেই লিমন হোসেন বিয়ে করেছেন। কনে যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওপাড়া এলাকার রাবেয়া বসরী। যশোরে কনের বাড়িতেই আজ শুক্রবার দুপুরে তাঁদের বিয়ে হয়। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে লিমনের গ্রামের বাড়িতে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিমনের পরিবার, সহপাঠী ও আত্মীয়-স্বজনেরা অংশ নেন।
লিমন হোসেন জানান, পরিবারের ইচ্ছায় মা-বাবার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করে এবার জীবনে আরেক ধাপ এগিয়ে যেতে চান তিনি।
লিমনের স্ত্রী রাবেয়া বসরী বলেন, ‘লিমন নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন। দাম্পত্য জীবনেও তিনি দায়িত্বশীল হবেন। এটা বুঝেই আমি এ বিয়েতে রাজি হয়েছি।’
১০ বছর আগে ২০১১ সালের ২৩ মার্চ র্যাবের গুলিতে পা হারিয়েছিলেন লিমন হোসেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৬ বছর। সে বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোচিত হয়, প্রশ্নবিদ্ধ হয় র্যাবের অভিযান।
ঝালকাঠির সাতুরিয়া গ্রামের পা হারানো সেই কিশোর এখন সাভার গণবিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের সহকারী প্রভাষক। বিয়ে করে এখন তিনি সংসার জীবন শুরু করতে যাচ্ছেন।
২০১১ সালের ২৩ মার্চ বিকেলে সাতুরিয়া ইউনিয়নে বাড়ির পাশের একটি বাগানে নিয়ে লিমনের পায়ে গুলি করেন র্যাব সদস্যেরা। এরপর র্যাবের পক্ষ থেকে লিমনসহ আট জনের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা ও অস্ত্র আইনে দুইটি মামলা করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লিমনের গুলিবিদ্ধ একটি পা কেটে ফেলতে হয়। সে বছরই লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে ঝালকাঠি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে র্যাবের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা করেন।
র্যাবের মামলা যখন চলে, তখন ঝালকাঠির কারা হাসপাতালে থাকা অবস্থায় পড়াশোনা চালিয়ে যান লিমন। জামিনে মুক্ত হয়ে ২০১৩ সালে পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার কাঁঠালিয়া পিজিএস বহুমুখী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি। পরের বছর মামলা দুটি থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে লিমনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে, লিমনের মায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ১০ বছরেও জমা দেয়নি তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
সাভার গণবিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে এলএলবি ডিগ্রি নিয়ে আইনি সহায়তা প্রদানকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টে (বিএলএএসটি) চাকরিও করেন তিনি। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলএম ডিগ্রি নিয়ে ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সাভার গণবিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে শিক্ষা সহকারী পদে যোগ দেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সহকারী প্রভাষক হিসেবে পদোন্নতি হয় লিমনের।
পা হারানোর সেই দুর্বিষহ দিন পেরিয়ে ছেলের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার যুদ্ধে গর্বিত লিমনের মা-বাবা। ছেলের বিয়ে নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত তাঁরা।