সড়কে প্রতিদিন ২৪ লাশ
সড়কপথে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল প্রতিদিন বেড়েই চলছে। এক জরিপে দাবি করা হয়েছে, ২০১৪ সালে প্রতিদিন সড়কে ঝরে গেছে ২৪টি প্রাণ। এ ছাড়া দিনপ্রতি গড়ে ৪৮ জন আহত অথবা পঙ্গু হয়েছেন।
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে গবেষণা পরিচালনাকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যাত্রী কল্যাণ সমিতির একটি জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনা উদ্বেগজনক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। দুর্ঘটনা রোধে নানা উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলা হলেও কার্যত পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। সংগঠনটি আজ বৃহস্পতিবার এই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে বলে বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর (২০১৪) বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় আট হাজার ৫৮১ জন মারা গেছেন এবং ১৭ হাজার ৫২৪ জন আহত হয়েছেন। বছরব্যাপী দেশে মোট পাঁচ হাজার ৯২৮টি দুর্ঘটনার খবর থানায় লিপিবদ্ধ করা হয়।
সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণা পর্যালোচনা, স্থানীয় পুলিশ স্টেশন থেকে প্রাপ্ত তথ্য, স্থানীয় মানুষ, যানবাহনের মালিক, সরকারি সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে দলীয় আলোচনা, চালকদের ওপর একটি জরিপ এবং দুর্ঘটনাপ্রবণ দুটি এলাকায় নিবিড় অনুসন্ধানের ভিত্তিতে গবেষণাটি করা হয়েছে। ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ গবেষণার কাজটি পরিচালনা করা হয়।
দুর্ঘটনার কারণে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশের বিভিন্ন থানায় অন্তত দুই হাজার ৩০০টি মামলা দায়ের করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক বছরে চালক, যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকসহ ২৬ হাজার ১১২ জন সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। আহতদের মধ্যে এক হাজার ৬২৩ জন হারিয়েছেন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।
বছরব্যাপী এ দুর্ঘটনায় এক হাজার ২৬৬টি বাস, এক হাজার ৪১৩টি ট্রাক, ৭১২টি হিউম্যান হলার, ৩৯০টি কার, জিপ ও মাইক্রোবাস, এক হাজার ২৩১টি অটোরিকশা, এক হাজার ৪৬৮টি মোটরবাইক, এক হাজার ১৭৩টি ব্যাটারিচালিত রিকশা, এক হাজার ৬৯টি নসিমন-করিমন দুর্ঘটনায় পড়ে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে মাসব্যাপী বিভিন্ন মাসের মোট দুর্ঘটনা ও আহত-নিহতের একটি তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে। এতে জানানো হয়, গত বছরের জানুয়ারিতে মোট দুর্ঘটনা ঘটে ৫৮৫টি। এতে ৬১৫ জন নিহত ও এক হাজার ৮৪২ জন আহত হয়। ফেব্রুয়ারিতে ৪৭৯টি দুর্ঘটনায় ৫৩৯ জন নিহত ও এক হাজার ২৭২ জন আহত হন।
মার্চে ৫৪৫টি দুর্ঘটনায় ৫৮৮ জন নিহত ও এক হাজার ৭০৬ জন আহত হন। এপ্রিলে দেশব্যাপী ৫৬৩টি দুর্ঘটনায় এক হাজার ৫৭৬ জন আহত ও ৬০১ জন নিহত হন।
মে মাসে হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে অনেকখানি। এই মাসে ৫৭৮টি দুর্ঘটনায় ৭৩৮ জন নিহত ও দুই হাজার ৪৬ জন আহত হন। জুনে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫০৬টি। এতে ৬৮৯ জন আহত ও এক হাজার ৮৩৬ জন নিহত হন।
জুলাইয়ে ৪২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫০৩ জন নিহত ও এক হাজার ৩৩২ জন আহত হয়। আগস্টে ৪৩৬টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ৪৬২ জন। এতে এক হাজার ২২৪ জন আহত হন।
সেপ্টেম্বরে ৪০৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ৬০২ জন নিহত ও এক হাজার সাতজন আহত হয়। অক্টোবরে ৩৯৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১২ জন নিহত ও এক হাজার ২২৪ জন আহত হয়।
নভেম্বরে ৫০৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ৪৮৮ জন নিহত ও ৯৬৯ জন আহত হয়। আর ডিসেম্বরে ঘটে ৪৪১টি সড়ক দুর্ঘটনা। এতে ৩৯৬ জন নিহত ও এক হাজার ১০৭ জন আহত হয়।
জরিপ তথ্য জানায়, ৫৩ শতাংশ দুর্ঘটনা জাতীয় এবং স্থানীয় মহাসড়কে। ২৬ শতাংশ শহরে এবং গ্রামের রাস্তায় বাকি ২১ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া গ্রামীণ ও মফস্বল অঞ্চলে হাটবাজার এবং শহরে ফুটপাত রাস্তাগুলোকে ক্রমাগত ছোট করে ফেলায় দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বেড়েই চলছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।