বরগুনা পুলিশের উদ্যোগ, ঘুরে দাঁড়ালেন মাকসুদা
দরিদ্র এক গৃহবধূর পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ। বরগুনার বেতাগী উপজেলার পুলের হাট গ্রামে দরিদ্র ওই গৃহবধূর জন্য একটি দোকান তৈরি করে দিয়েছে জেলা পুলিশ।
আজ বুধবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘মুক্তি স্টোর’ নামের সেই ছোট্ট দোকানটির উদ্বোধন করেন পুলিশ সুপার বিজয় বসাক।
জানা যায়, চার শিশুসন্তান নিয়ে দরিদ্র গৃহবধূর মাকসুদা (৩৫) ভুগছিলেন রক্তশূন্যতায়। অভাবী সংসারের বোঝা বইতে না পেরে স্বামী শহিদুল (৪০) তাঁদের ফেলে রেখে ঢাকা চলে যান। চারটি সন্তানের মুখে ভাত দেওয়া তো দূরের কথা শারীরিক অসুস্থতার কারণে মাকসুদা বেগম যখন বিছানা ছেড়েই উঠতে পারছিলেন না ওই সময় মাকসুদার পাশে এসে দাঁড়ায় বরগুনা জেলা পুলিশ।
স্থানীয় উন্নয়ন সংগঠন জাগো নারীর রি-কল প্রকল্পের উদ্যোগে সম্প্রতি মাকসুদা বেগমকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জরুরি ভিত্তিতে তাঁর শরীরে পাঁচ ব্যাগ রক্ত দেওয়ার পরামর্শ দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বরগুনায় সদ্য প্রতিষ্ঠিত ‘পুলিশ লাইভ ব্লাড ব্যাংক’ থেকে মাকসুদার জন্যে রক্তের সংস্থান করা হয়। হাসপাতালে মাকসুদাকে দেখতে যান বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক। এ সময় মাকসুদার জীবনের করুণ গল্প শুনে মাকসুদার জীবিকার জন্য একটি ক্ষুদ্র দোকান বানানোর উদ্যোগ নেন পুলিশ সুপার বিজয় বসাক।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি), কমিউনিটি পুলিশ এবং স্থানীয় একাধিক উন্নয়ন সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের সহযোগিতায় বরগুনার বেতাগী উপজেলার বুড়ামজুমদার ইউনিয়নের পুলেরহাট বাজারে মাকসুদার জন্যে তৈরি করা হয় একটি ছোট্ট দোকান। নাম দেওয়া হয় মুক্তি স্টোর। সবার সহযোগিতায় কেনা হয় দোকানের প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী। দরিদ্র মাকসুদার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় স্থানীয় অধিবাসীরাও।
উন্নয়ন সংগঠন জাগো নারীর প্রধান নির্বাহী হোসনে আরা হাসি বলেন, বরগুনা ও বেতাগী উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে মাকসুদার মতো সাড়ে তিন হাজার দরিদ্র উপকারভোগীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে রি-কল প্রকল্প। রি-কল প্রকল্পের সহযোগিতায় অধিকাংশ দরিদ্র উপকারভোগীই ক্ষুদ্র ব্যবসার মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতা এবং ছোট ছোট চারটি সন্তানের কারণে মাকসুদা ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। তার ওপর স্বামী ফেলে চলে যাওয়ায় চার সন্তানসহ মাকসুদা বেগমের জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এ সময় মাকসুদার পাশে এসে দাঁড়ায় বরগুনা জেলা পুলিশ। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় স্থানীয় বাসিন্দারাও।
পুলিশ সুপার বিজয় বসাক বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ শুরু থেকেই অসহায় মানুষের পাশে ছিল, এখনো আছে। বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধের সময় রক্ত দিয়েছে, দেশ মাতৃকার নিরাপত্তায় এখনো রক্ত দিয়ে যাচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় অসহায় মানুষের সেবায় বরগুনায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে পুলিশ লাইভ ব্লাড ব্যাংক। অসহায় গৃহবধূ মাকসুদাকেও পুলিশ লাইভ ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত দেওয়া হয়েছে। সে সময় তাঁর অসহায় জীবনের কথা শুনে তাঁর পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় জেলা পুলিশ। সবার সহযোগিতা পেলে মাকসুদা বেগম আবার ঘুরে দাঁড়াবেন বলে আমার বিশ্বাস।’
আজ সকালে মাকসুদার ছোট্ট দোকান মুক্তি স্টোরের উদ্বোধনের সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি ও জেলা এনজিও উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি আবদুল মোতালেব মৃধা, বেতাগী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সোবাহান, বুড়াবজুমদার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ গোলাম রব, কাজিরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. মোশাররফ হোসেন, বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসানুর রহমান ঝন্টু, জাগো নারীর প্রধান নির্বাহী হোসনে আরা হাসি, বিশিষ্ট সমাজসেবক সুখরঞ্জনশীল, সাংবাদিক সোহেল হাফিজ এবং মুশফিক আরিফ।
অনুষ্ঠানে বেতাগী থানা ও জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ দুইশতাধিক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।