দুই জেএসএস নেতার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে হামলা এবং দমন-পীড়নের মাধ্যমে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হলে এই আন্দোলন অগণতান্ত্রিক পথে ধাবিত হতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতারা।
আজ বৃহস্পতিবার রাঙামাটিতে জেএসএস বান্দরবান সদর থানা শাখার সভাপতি উচসিং মারমা এবং রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলা পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের অর্থ সম্পাদক সুনীতিময় চাকমাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশে নেতারা এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এ সময় বান্দরবানে জেএসএস ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে নেতারা জেএসএস ও এর সহযোগী সংগঠনের কর্মীদের হয়রানি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের অসহযোগ আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে এই মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তাঁরা বলেন, এখানে সরকারি দল ও স্থানীয় প্রশাসনের একটি মহল ষড়যন্ত্র করে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ও ‘সেটেলার’দের দিয়ে জেএসএসের শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলনকে অশান্তিপূর্ণ পথে নিয়ে যেতে বাধ্য করছে।
নেতারা আরো অভিযোগ করেন, এই গোষ্ঠী সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বরকলের ভূষণছড়া ইউনিয়নের ছোট হরিণা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট ডাকাতির প্রতিবাদে এবং নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে আহূত সড়ক অবরোধ কর্মসূচিকে বানচালের ষড়যন্ত্র করছে।
অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আরো কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে বলে নেতারা হুঁশিয়ারি দেন।
জনসংহতি সমিতির রাঙামাটি জেলা কমিটির সভাপতি সুবর্ণ চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় ভূমি ও কৃষিবিষয়ক সম্পাদক চিংলামং চাক, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জোনাকী চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অরুণ ত্রিপুরা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা কমিটির সভাপতি অন্তিক চাকমা প্রমুখ।
সমাবেশ পরিচালনা করেন জনসংহতি সমিতির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নীলোৎপল খীসা ও মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুপ্রভা চাকমা।
বান্দরবান সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মংপু মারমাকে অপহরণের ঘটনায় জেএসএস উপজেলা কমিটির সভাপতি উচসিং মারমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই অপহরণ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে জেএসএসের সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য কে এস মং মারমাকে, ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে জেএসএস কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরা মিল্টনকে।
এই অপহরণের প্রতিবাদে গত দুইদিন ধরেই সেখানে সর্বাত্মক অবরোধ পালন করছে জেলা আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ এই অপহরণ ঘটনার জন্য জেএসএসকেই দায়ী করছে। যদিও জেএসএস তা অস্বীকার করে আসছে।
অন্যদিকে গত ১৪ জুন রাঙামাটির বিলাইছড়িতে জনসংহতি সমিতির অবরোধ চলাকালে অনলাইনে ভর্তি ফরম পূরণ করতে এক পাহাড়ি কিশোরী একটি বাঙালি মালিকানাধীন কম্পিউটার দোকানে প্রবেশ করলে কয়েকজন জেএসএসকর্মী তাঁকে মারধর করে এবং শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সময় কিশোরীটি দৌড়ে পার্শ্ববর্তী সেনাক্যাম্পে আশ্রয় নেয়।
এ ঘটনায় সেনাসদস্যদের সহায়তায় পুলিশ চার জেএসএস কর্মীকে আটক করলেও পরে তিনজনকে ছেড়ে দেয়। পুলিশ পিসিপির বিলাইছড়ি উপজেলা কমিটির অর্থ সম্পাদক সুনীতিময় চাকমার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করে জেলাহাজতে পাঠায়।
অবরোধ প্রত্যাহার না হলে কঠোর কর্মসূচি
এদিকে জেএসএসের ডাকা আগামী ১৯, ২০ এবং ২১ জুনের অবরোধ প্রত্যাহার করা হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুমকি দিয়েছে পার্বত্য গণশ্রমিক পরিষদ নামের একটি সংগঠন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে সংগঠনের বনরূপাস্থ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভা থেকে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। সভায় বক্তারা বলেন, পবিত্র রমজান মাসে ভূয়া দাবিতে একের পর এক অবরোধের নামে হরতাল দিয়ে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, রোজদার সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেওয়া এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান সম্প্রীতির পরিবেশকে বিনষ্ট করার পাঁয়তারা করছে সংগঠনটি।
নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ধৈর্য এবং সহ্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেলে পরিণতি শুভ হবে না।
সংগঠনটির জেলা আহ্বায়ক মো. রাসেল ইসলাম সাগরের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য দেন সদস্য সচিব প্রদীপ দেবনাথ, জাহিদুল ইসলাম, নাজিমউদ্দিন, সালাউদ্দিন, মো. ইসমাঈল প্রমুখ।