পঞ্চগড়ে পাউবো কার্যালয়ে তালা, প্রকৌশলীকে অবরুদ্ধ
পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয়ের ফটকে তালা লাগিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমানকে অবরুদ্ধ করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। তবে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রবীন্দ্র চন্দ্র সোম পালিয়ে যান।
আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রধান গেট তালাবদ্ধ রেখে নির্বাহী প্রকৌশলীকে বাসা থেকে বের হতে দেননি ক্ষুব্ধ লোকজন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ফটকের তালা খুলে কার্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনার সামনে অবস্থান নেয়।
পাউবোর তিনটি গ্রুপে এক কোটি ৬০ লাখ টাকার কাজে ১৫ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে সর্বোচ্চ ২৯ শতাংশ ছাড় দেওয়া দরদাতা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খন্দকার শাহীন আহাম্মদকে না দিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশ ছাড় দেওয়া দরদাতা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গুডম্যান এন্টারপ্রাইজকে কাজ দেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদে কাজ বঞ্চিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন কার্যালয়ে তালা ও নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চগড় সদর উপজেলার নলকুড়া এলাকায় বালি, সিমেন্ট ও গ্যানি ব্যাগ দিয়ে করতোয়া নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের কাজের জন্য প্রথমবার ইজিপি দরপত্র আহ্বান করা হয়। সে সময় অতিরিক্ত ৩৪ শতাংশ ছাড় দেওয়ায় কাজটি পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। দ্বিতীয় দফায় তিনটি গ্রুপে আবারও দরপত্র আহ্বান করা হয়। চলতি বছরের ১৩ জুন ছিল দরপত্র জমাদান ও খোলার শেষ তারিখ। তিনটি গ্রুপে ছয়জন করে মোট ১৮ জন ঠিকাদার দরপত্র দাখিল করে।
ফরিদপুরের খন্দকার শাহীন আহাম্মেদ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি কামরুজ্জামান শেখ মিলন জানান, তিনটি গ্রুপেই খন্দকার শাহীন আহাম্মদ ২৯ শতাংশ ছাড়ে এবং টাঙ্গাইলের গুডম্যান এন্টারপ্রাইজ ১৪ শতাংশ ছাড় দিয়ে দরপত্র দাখিল করে। নিয়মানুযায়ী সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়া দরদাতা কাজটি পাওয়ার কথা। কিন্তু নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ১৫ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা গুডম্যান এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজটির ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়ার প্রক্রিয়া করে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার (২০ জুন) রাতে পাউবোর ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন, নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান ও উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রবীন্দ্র চন্দ্র সোম এবং গুডম্যান এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সিদ্ধান্তের জন্য বসেছিলেন। সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়া দরদাতা হয়েও কাজটি অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে খন্দকার শাহীন আহাম্মদ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন রাতেই তাদের ধাওয়া করে এবং আজ সকাল থেকে অফিসে তালা ও নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
কামরুজ্জামান শেখ মিলন জানান, দর পছন্দ না হলে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করবেন। কিন্তু দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়া ঠিকাদার গুডম্যান এন্টারপ্রাইজকে কাজের ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হলে সরকারের প্রায় ২৩ লাখ টাকা ঘাটতি হবে। আর সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়া ঠিকাদারকে কাজটি দেওয়া হলে সরকারের ২৩ লাখ টাকা বাঁচবে বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে আজ সকাল থেকে পাউবো কার্যালয়ের ফটকে তালা ও অফিসের সামনে যুবকদের ভিড় দেখে নির্বাহী প্রকৌশলী পুলিশ প্রশাসনকে ফোন করে সহযোগিতা চান। খবর পেয়ে পুলিশ দুপুরের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন এবং বিভিন্ন স্থাপনার সামনে অবস্থান নেন। অতিরিক্ত পুলিশ দেখে স্থানীয় উৎসুক মানুষও সেখানে ভিড় করেন।
পঞ্চগড় পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রবীন্দ্র চন্দ্র সোমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ভোর বেলা বাসা থেকে বেরিয়ে যান এবং বর্তমানে ঠাকুরগাঁয়ে রয়েছেন বলে জানান। এখন পর্যন্ত কাজ দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও তিনি জানান।
ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে পঞ্চগড় পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘কাজ কে পাবে না পাবে তা নির্ধারণ করবে তিন সদস্যের দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি। এখনো মূল্যায়ন চলছে। কমিটি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ঠিকাদারও নির্বাচন করা হয়নি। পিপিআর অনুযায়ী আইনের বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। এটি আন্ডার প্রসেসিং অবস্থায় রয়েছে।’
পঞ্চগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মমিনুল ইসলাম মমিন অফিসে তালা লাগানো ও নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবরুদ্ধ করে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিকেলে সব পক্ষ মিলে বসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, খন্দকার শাহীন আহম্মেদ ও গুডম্যান এন্টারপ্রাইজ নামের ওই দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক পঞ্চগড়ে আসেন না, বর্তমানেও নেই। দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের স্থানীয় দুটি পক্ষ।