আবার কামারুজ্জামানের সাক্ষাৎ চান স্বজনরা
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের সঙ্গে আবার দেখা করতে আবেদন করবেন তাঁর স্বজনরা। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর কারা কর্তৃপক্ষের কাছে এ আবেদন করা হবে।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামি এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদনের রায়ের পর কারা কর্তৃপক্ষের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা গতকাল বাবার সঙ্গে দেখা করেছি। কিন্তু আমরা তাঁর সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পাইনি। মাঝখানে ব্যারিকেড ছিল। এ কারণে শেষবারের মতো বাবার সঙ্গে বুক মেলানোর সৌভাগ্য হয়নি।’
হাসান ইকবাল আরো বলেন, ‘গতকালের দেখা যদি শেষ দেখা হয়, আমাদের একটা আফসোস থেকে যাবে বাবার সঙ্গে মোলাকাত না করার। তাই আমরা সরাসরি দেখা করার জন্যই রায় প্রকাশের পর আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে আগামীকাল পুনরায় দেখা করার আবেদন করব।’
এর আগে রায় প্রকাশের পর গত সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৪২ মিনিটে কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করতে পরিবারের সদস্যরা কারাগারে প্রবেশ করেন। ওই সময় পুলিশের বিশেষ শাখার উপপরিদর্শক রায়হান মোল্লা জানিয়েছিলেন, পরিবারের মোট ১৬ জন সদস্য কারাগারে প্রবেশ করেছেন। তাঁরা হলেন কামারুজ্জামানের স্ত্রী নুরুন্নাহার, ছেলে হাসান ইমাম ওয়াফি, মেয়ে আতিয়া নূর, ভাগ্নি রোকসানা জেবিন, তাঁর ছেলের স্ত্রী শামীম আরা, বড় মেয়ে বিউটি, ভাই কামরুল, আরেক ছেলে সাফি, ভাইয়ের স্ত্রী আরিফা, ভাতিজা আরমান, ভাতিজি আফ্রা, শ্যালক রোমান, ভাতিজি মলি, ভাতিজা জিতু, ভাতিজি মুনমুন ও মুন্নি।
সোমবার দুপুরে কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর পরিবারকে চিঠি দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। চিঠিতে বিকেল ৫টায় তাঁদের কারাগারে যেতে বলা হয়।
২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গত বছরের ৩ নভেম্বর তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। চলতি বছর গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। এর পর ১৯ ফেব্রুয়ারি কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পৌঁছায়। ৫ মার্চ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় কামারুজ্জামানের পক্ষে রিভিউ আবেদন করা হয়।
২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২ আগস্ট তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সেই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী সাতটি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের ৪ জুন কামারুজ্জামানের বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল।
এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুটিতে মৃত্যুদণ্ড, দুটিতে যাবজ্জীবন ও একটিতে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।