রাবার ড্যামে কৃষকের মুখে হাসি
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/04/08/photo-1428504452.jpg)
কয়েক বছর আগের কথা। সেচের পানির অভাবে দিনাজপুরের সদর উপজেলা ও চিরিরবন্দর উপজেলায় কাঙ্ক্ষিত ফসল উৎপাদিত হতো না। শুকনো মৌসুমে অনাবাদি থাকত হাজার হাজার একর জমি। সেই সময় এখন আর নেই। দুটি উপজেলায় এখন বছরে প্রায় আড়াই হাজার টন অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদিত হচ্ছে। আর এ সবই সম্ভব হচ্ছে আত্রাই নদীর ওপর রাবার ড্যাম নির্মাণ করায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ২২ অক্টোবর দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার পূর্বে সদর উপজেলার মোহনপুরে আত্রাই নদীর ওপর দেশের সর্ববৃহৎ রাবার ড্যামের উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে কৃষকরা স্বল্প খরচে সেচের সুবিধা পাচ্ছেন। এ সেচসুবিধার কারণে মরুকরণের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলিজমি।
দিনাজপুর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য হুইপ ইকবালুর রহিম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে এ অঞ্চলের কৃষকদের আবাদ করতে কষ্ট হতো। কৃষকদের কথা চিন্তা করে দেশের সর্ববৃহৎ এ রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে।’
স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে প্রায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩৫ মিটার দীর্ঘ এই রাবার ড্যাম তৈরি করা হয়েছে। এর কারণে সদর উপজেলার শংকরপুর, শেখপুরা, ফাজিলপুর, শশরা ও উথরাইল ইউনিয়ন এবং চিরিরবন্দর উপজেলার সাইতারা, আবদুলপুর, ভিয়াইল ও আউলিয়া পুকুর ইউনিয়নের হাজার হাজার হেক্টর জমি সেচসুবিধার আওতায় এসেছে। আর এতে উপকৃত হয়েছেন ওই দুই উপজেলার প্রায় দুই হাজার কৃষক পরিবার।
সেচসুবিধা নিতে বছরে কৃষকদের একরপ্রতি মাত্র ১০০ টাকা দিতে হয়। এসব এলাকার একাধিক কৃষক এনটিভি অনলাইনকে জানান, সারা বছর সেচের প্রয়োজন হয়। রাবার ড্যাম হওয়ায় ধান আবাদ করতে সুবিধা হচ্ছে। সেচ বাবদ তাঁদের খরচ কমে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, খরা মৌসুমে রাবার ড্যামের আওতায় সেচসুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে বছরে বোরো ধানের উৎপাদন প্রায় সাড়ে তিন হাজার মেট্রিক টন বৃদ্ধি পাবে। এতে বছরে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন এই এলাকার কৃষকরা।
এ ছাড়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে আত্রাই ও কাঁকড়া নদীর ৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ জলাশয়ে মাছ চাষের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যা ওই দুই উপজেলার মানুষের জীবিকা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আবদুল হান্নান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘পানির স্তর যা নিম্নমুখী ছিল, তা এরই মধ্যে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। জলাশয়ে মাছ চাষ হবে। কৃষির উন্নয়নে ড্যামটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
দিনাজপুরের স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী খলিলুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘৬২ গ্রামকে সেচসুবিধার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এতে পাঁচ কোটি টাকার অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘রাবার ড্যাম থেকে সেচ সুবিধা নিতে কৃষকদের অতিরিক্ত খরচ দিতে হচ্ছে না। এতে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।’