কামারুজ্জামানের দাফন সম্পন্ন
মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে শেরপুরে তাঁর গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। রোববার ভোরে ফজরের নামাজের পর সদর উপজেলার কুমরী মুদিপাড়ায় বাজিতখিলা এতিমখানা মাদ্রাসার পাশে শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর লাশ দাফন করা হয়।
পুলিশ জানায়, এর আগে রাত ৪টা ২০ মিনিটের দিকে কুমরী মুদিপাড়ায় কামারুজ্জামানের লাশবাহী গাড়িবহর পৌঁছে। সেখানে লাশ গ্রহণ করেন তাঁর বড়ভাই কফিল উদ্দিন। তার পরেই মাওলানা আবদুল হামিদের ইমামতিতে কামারুজ্জামানের জানাজা সম্পন্ন হয়।
শনিবার রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কামারুজ্জামানের রায় কার্যকর করা হয়। পরে রাত ১১টা ৪০ মিনিটে তাঁর লাশবাহী গাড়ি শেরপুরের পথে রওনা হয়। রাত সোয়া ৩টার দিকে কামারুজ্জামানের লাশবাহী গাড়িবহর শেরপুর জেলার সীমানায় প্রবেশ করে। জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) শাহজাহান মিয়া তা গ্রহণ করেন।
স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন গণমাধ্যমে রায় বাস্তবায়নের খবর পেয়ে মধ্যরাতের আগেই কবর তৈরিসহ দাফনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখেন পরিবারের সদস্যরা। রাতেই বিভিন্ন স্থান থেকে আত্মীয়স্বজন জানাজায় অংশ নিতে কামারুজ্জামানের গ্রামের বাড়িতে জড়ো হন।
রাতে ওই এলাকায় প্রচুর ঝড়-বৃষ্টি হয়। পুরো এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। রাত ৪টার দিকে বিদ্যুৎ এলেও থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল বলে জানান স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা। তাঁরা জানান, কামারুজ্জামানের গ্রামের বাড়ির আশপাশে কাউকেই ঢুকতে দেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। লাশবাহী গাড়িবহরের সঙ্গে ঢাকা থেকে যেসব গণমাধ্যমকর্মী এসেছিলেন, তাঁদেরও বাজিতখিলা বাজারেই আটকে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাজিতখিলা বাজারের মোড়ে অপেক্ষা করে অনেকেই জেলা শহরে ফিরে যান।
বাজিতখিলা এলাকা রাতভর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশের নিয়ন্ত্রণে ছিল বলে এনটিভি অনলাইনকে জানান শেরপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মেহেদুল করিম।
এদিকে, মুক্তিযোদ্ধারা কামারুজ্জামানকে শেরপুরে দাফন করতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে শনিবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পর তাঁরা দাফন প্রতিহত করার পরিবর্তে আনন্দ-মিছিল করার ঘোষণা দেন।
জেলা প্রশাসক জাকীর হোসেন বলেন, ‘জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল শুরুতে কামারুজ্জামানকে শেরপুরে দাফন করার ক্ষেত্রে প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও আমাদের অনুরোধে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।’
২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গত বছরের ৩ নভেম্বর তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। চলতি বছর গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। এর পর ১৯ ফেব্রুয়ারি কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পৌঁছায়। ৫ মার্চ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় কামারুজ্জামানের পক্ষে রিভিউ আবেদন করা হয়।
২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২ আগস্ট তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। সেই থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী সাতটি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের ৪ জুন কামারুজ্জামানের বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুটিতে মৃত্যুদণ্ড, দুটিতে যাবজ্জীবন ও একটিতে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।