মেঘনায় ঝাঁপ দিয়েছেন মা-বোন, পথ জানে না নুসরাত
সদরঘাট থেকে দুই মেয়েশিশু নিয়ে ঢাকা-বরগুনা রুটের এমভি কিং সম্রাট লঞ্চে উঠেছিলেন পরী বেগম নামের এক নারী। যাত্রাপথের শুরু থেকেই দুই মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন তিনি। লঞ্চের সহযাত্রীরা দেখতে পান, কান্নার ফাঁকে ফাঁকে দুই শিশুকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টাও করেছিলেন তিনি।
মায়ের কান্না দেখে ঘুমাতে পারেনি দুই শিশু। চাঁদপুর ছেড়ে লঞ্চ যখন মেঘনার গভীরে, ঠিক তখন রাত ১১টার দিকে পরী বেগম লঞ্চের রেলিংয়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছোট্ট শিশু নাজিয়াও পিছু নেয় মায়ের। হঠাৎই নিকষ অন্ধকারে ঝাঁপ দেন পরী। মাকে ধরতে গিয়ে নদীতে পড়ে যায় ছোট্ট শিশু নাজিয়াও।
এদিকে মা আর বোনকে না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে অপর শিশু নুসরাত (৬)।
লঞ্চের অন্য যাত্রীদের কাছে খবর পেয়ে মেঘনায় ঝাঁপিয়ে পড়া মা ও তার মেয়েশিশুর খোঁজে ঘণ্টাখানেক লঞ্চ থামিয়ে রাখে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। কোথাও কোনো খোঁজ না পেয়ে লঞ্চটি ছেড়ে আসে বরগুনার উদ্দেশে।
আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে বরগুনার ঘাটে এসে পৌঁছায় লঞ্চ এমভি কিং সম্রাট। নুসরাত নামের শিশুটি বরগুনা থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
পুলিশকে নুসরাত জানিয়েছে, তার বাবার নাম আক্তার হোসেন। তিনি একটি চশমার দোকানে কাজ করেন। বাবা-মাসহ তারা যাত্রাবাড়ী থাকত বলেও জানায় সে। শিশুটি আরো জানায়, তিন ভাইবোনের মধ্যে সে সবার ছোট। বড় ভাইয়ের নাম আল আমিন। মাওয়া চৌরাস্তায় তাদের গ্রামের বাড়ি। নানা বা দাদার নাম বলতে পারে না সে। তবে মানিক, টোকন ও রাজীব নামের তিন মামার নাম বলতে পারে সে। এর মধ্যে রাজীব বিদেশে থাকে এবং মানিকের জামা-কাপড়ের দোকান আছে বলে সে পুলিশকে জানিয়েছে।
এমভি কিং সম্রাটের মাস্টার আবুল হোসেন জানান, রাত ১১টার দিকে লঞ্চ যখন মিয়ার চরের কাছাকাছি, তখন সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে এক নারীর নদীতে লাফ দেওয়ার খবর পেয়ে তাঁরা লঞ্চ থামিয়ে ফেলেন। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বেশিক্ষণ লঞ্চ থামিয়ে রাখা যাচ্ছিল না। মেঘনাও ভীষণ উত্তাল ছিল সে সময়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে আবুল হোসেন বলেন, পরী বেগম তাঁর দুই শিশুকে নিয়ে লঞ্চের নিচতলার ডেকে বসেছিলেন। সেখানে তিনি কিছুক্ষণ কোরআন শরিফ পড়েছেন। নামাজ পড়েছেন। কান্নাকাটিও করেছেন অনেক। বাচ্চাদের ঘুম পড়ানোরও চেষ্টা করেছিলেন তিনি। এরপর রাত ১২টার দিকে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন পরী বেগম। এ সময় নাজিয়া নামের তাঁর এক মেয়েশিশু মাকে ধরতে গিয়ে নদীতে পড়ে যায়। মাস্টার আবুল হোসেন বলেন, উত্তাল মেঘনায় বেশিক্ষণ লঞ্চ থামিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই মা-মেয়েকে কিছুক্ষণ খোঁজার চেষ্টা করে না পেয়ে লঞ্চ চালিয়ে বরগুনা চলে আসেন তাঁরা।
এ বিষয়ে বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রিয়াজ হোসেন জানান, শিশুটির মা পরী বেগম আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে পুরোপুরি তদন্ত না করে এ বিষয়ে নিশ্চিত কিছু বলা যাবে না। নুসরাতের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পরিবারের সদস্যদের খুঁজে পেতে যাত্রাবাড়ী এবং মাওয়া থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।