বিএনপি নেতা কাইয়ুমসহ দুজনকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ
ইতালির নাগরিক তাভেলা সিজার হত্যা মামলায় ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার এম এ কাইয়ুম ও সোহেল ওরফে ভাঙ্গাড়ি সোহেলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
আজ রোববার ঢাকার মহানগর হাকিম সাব্বির ইয়াসির আহমেদের আদালতে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) দেওয়া অভিযোগপত্রটি উপস্থাপন করলে বিচারক তা গ্রহণ করে এ পরোয়ানা জারি করেন। এ সঙ্গে বিচারক তাঁদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ২৮ জুন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক গোলাম রাব্বানী বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার এম এ কাইয়ুমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
ওই দিন আদালত অভিযোগপত্রটি শনাক্ত করে ৪ আগস্ট অভিযোগপত্র গ্রহণবিষয়ক শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করেন। কিন্তু ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু অভিযোগপত্র গ্রহণবিষয়ক শুনানি এগিয়ে আনার আবেদন করলে আজ ১৭ জুলাই নতুন তারিখ নির্ধারণ করেন আদালত।
অভিযোগপত্রে আসামিরা হলেন কাইয়ুমের ভাই আবদুল মতিন, তামজিদ আহমেদ ওরফে রুবেল, রাসেল চৌধুরী, মিনহাজুল আরেফিন ওরফে ভাগনে রাসেল ও শাখাওয়াত হোসেন ও সোহেল।
আসামিদের মধ্যে তামজিদ, রাসেল চৌধুরী, মিনহাজুল ও শাখাওয়াত আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।
এ ছাড়া আসামি মতিনসহ স্বীকারোক্তি দেওয়া অন্য আসামিরা কারাগারে আটক রয়েছেন। অন্যদিকে কাইয়ুম ও সোহেল পলাতক।
অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, হামলাকারীদের লক্ষ্য ছিল একজন শ্বেতাঙ্গকে হত্যা করে দেশ-বিদেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে এই পরিকল্পনা করা হয়।
অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, ভাঙ্গাড়ি সোহেলের কাছ থেকে পিস্তল ভাড়া নিয়ে খুনিরা তাভেলা সিজারকে হত্যা করে। মতিনের নির্দেশে ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর শাখাওয়াতের মোটরসাইকেল নিয়ে মিনহাজুল, তামজিদ ও রাসেল চৌধুরী গুলশান-২-এর ৯০ নম্বর সড়কে যান। ওই সড়কের গভর্নর হাউসের সীমানাপ্রাচীরের বাইরে ফুটপাতে নিরিবিলি ও অন্ধকার স্থানে তামজিদ গুলি করে তাভেলা সিজারকে (৫১) হত্যা করেন। এতে তাঁকে সহায়তা করেন রাসেল চৌধুরী ও মিনহাজুল।
মোটরসাইকেলটি চালিয়েছিলেন মিনহাজুল। মামলায় ওই মোটরসাইকেল আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, বিএনপির নেতা এম এ কাইয়ুমের পরিকল্পনা ও অর্থায়নে তাভেলা সিজারকে হত্যা করা হয়। কাইয়ুম পরিকল্পনা করলেও সেটা বাস্তবায়ন করেন তাঁর ছোট ভাই আবদুল মতিন।
পিস্তল সরবরাহকারী সোহেল গ্রেপ্তার না হওয়ায় পিস্তলটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে পিস্তলটি না পেলেও ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়েছে।
গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর গুলশানে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন তাভেলা সিজার। এ ঘটনায় ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলায় দায়ের করা হয়।
নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইসিসিও কো-অপারেশনের বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি হেলেন সাফ ভ্যান ডাক বিক বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করেন।
পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর মামলাটি ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ঘটনার পর সিসিটিভি ফুটেজে তাভেলাকে গুলি করে তিন হত্যাকারীকে মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যেতে দেখা যায়।
৫০ বছর বয়সী তাভেলা আইসিসিও কো-অপারেশনের ‘প্রফিটেবল অপরচুনিটিজ ফর ফুড সিকিউরিটির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ছিলেন। আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিসিওবিডির কর্মকর্তা তাভেলা সিজার।