মেহেরপুরে ভোটকেন্দ্রিক সহিংসতায় আহত ব্যক্তির মৃত্যু

নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা ও পূর্ব বিরোধের জের ধরে হামলায় আহত মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার আবদুল হাই (৬০) মারা গেছেন। গতকাল সোমবার মধ্যরাতে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
আব্দুল হাই উপজেলার সাহেবনগর গ্রামের মৃত ফজল সর্দারের ছেলে। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
আব্দুল হাইয়ের মৃত্যুর খবর আসার পর পরই এ মামলার আসামি তাঁর আপন ভাই আব্দুর রাজ্জাকসহ অন্যরা গা-ঢাকা দিয়েছেন।
মামলার বরাতে জানা যায়, উপজেলার কাজীপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সাহেবনগর গ্রামে গত ৭ মে ইউপি নির্বাচনে হাবিবুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম নাড়া সদস্য পদে নির্বাচন করেন। নির্বাচনে হাবিবুর রহমানের পক্ষে ছিলেন সাবেক সেনা সদস্য আব্দুর রাজ্জাক এবং শরিফুল ইসলাম নাড়ার পক্ষে ছিলেন আব্দুল হাই। নির্বাচনে হাবিবুর রহমান বিজয়ী হন।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। এর মধ্যেই গত ২৯ জুন সকালে ছাদ থেকে বৃষ্টির পানি পড়াকে কেন্দ্র করে দুই ভাইয়ের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। এ সময় আব্দুর রাজ্জাক ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর মেজ ভাই আব্দুল হাইকে কুপিয়ে জখম করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
আহত আব্দুল হাইকে উদ্ধার করে প্রথমে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। পরে সেখান থেকে তাঁকে কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সেখান থেকে ঈদের আগে আব্দুল হাইকে নিজ বাড়ি সাহেবনগরে ফিরিয়ে আনা হয়। অবস্থা খারাপ হওয়ায় গত ১৭ জুলাই পুনরায় ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় তিনি মারা যান।
পরিবারের লোকজন আব্দুল হাইয়ের মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে সাহেবনগরে নিলে গাংনী থানা পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মেহেরপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এদিকে হামলার ঘটনার দিনই গাংনী থানায় বিজয়ী ইউপি সদস্য হাবিবুরকে প্রধান এবং আব্দুর রাজ্জাককে দুই নম্বর আসামি করে মোট ছয়জনের বিরুদ্ধে আব্দুল হাই বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।
নিহতের চাচাত ভাই শহিদুল হক জানান, ছাদের পানি পড়া নিয়ে এক ভাই আরেক ভাইকে মেরেছে। এমন ঘটনায় কারো মৃত্যু হতে পারে এটা ভাবা যায় না।
ইউপি সদস্য পদে পরাজিত প্রার্থী শরিফুল ইসলাম নাড়া বলেন, ‘নির্বাচনী বিরোধ ছাড়াও ভাইয়ে ভাইয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ রয়েছে। এর জের ধরেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে আমি শুনেছি।’
কাজীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলম হুসাইন বলেন, নির্বাচনী প্রচার নিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে কোন্দল ছিল।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) গাংনী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শহিদুল ইসলাম বলেন, ওই ঘটনায় ছয়জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। মামলার চার আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। বাকিরা পলাতক।