সেই বাড়ির ভাড়া পেতেন ‘যুবলীগের’ মুনীর
রাজধানীর খিলগাঁওয়ের ঝিলপাড়ে গত বুধবার দুপুরে বাঁশের খুঁটির ওপর নির্মিত দোতলা টিনের যে বাড়িটি দেবে যায়, তার মালিক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে সেখান থেকে নিয়মিতই ভাড়া ওঠানো হতো। সেই ভাড়া ওঠানোর জন্য ম্যানেজারও ছিল। বৈধতা না থাকলেও প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ ছিল, গ্যাস ছিল, পানির লাইন ছিল।
বাসিন্দাদের কেউ বাড়িটি নিয়ে তথ্য প্রকাশ করতে নারাজ। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দা বলেন, ‘মালিকের নাম মুনীর বলে শুনেছি। কখনো দেখিনি। তবে ভাড়া আদায় করত একজন ম্যানেজার।’ ম্যানেজারের নাম জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, ‘তার বাড়ি কুমিল্লায়।’ কিন্তু কিছুতেই নাম প্রকাশ করেননি তাঁরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, মুনীর চৌধুরী ঢাকা মহানগর যুবলীগের নেতা। মুনীর এসব ঘর থেকে টাকা আদায় করতেন। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক।
ঝিলের মালিকানা কার কাছে-এ নিয়ে প্রশাসনও কিছু বলতে পারছে না। জেলা প্রশাসক তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, ‘দুর্ঘটনার বিষয়টি তদন্ত করার জন্য কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটি ঝিলের মালিকানার বিষয়টি নিয়েও তথ্য জানার কাজ করবে। এরই মধ্যে কমিটি মানচিত্র সংগ্রহ করে কাজ শুরু করেছে।’ তিনি আরো বলেন, কমিটি আগামী পাঁচদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। তখনই বিষয়টি সম্পর্কে জানা যাবে।
ঝিলের পাশের রাস্তায় নিজ বাড়ি আছে এমন কয়েকজন ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজ দেখতে এসেছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাড়ির মালিক জানান, ‘আমরা তো জানি ঝিল, ঝিলের পাশের মাঠের মতো জায়গা সব ব্যক্তি মালিকানাধীন।’
স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) এ কে এম রহমত উল্লাহ বলেন, ‘এটা সরকারি জমি। খাস কি না জানি না। যদি অবৈধভাবে কেউ দখল করে থাকে, তবে অবশ্যই তার শাস্তি হবে।’
টিনের বাড়ির মালিক যুবলীগ নেতা মুনীর চৌধুরী কি না জানতে চাইলে রহমত উল্লাহ বলেন, ‘আমি শুনেছি মালিক যুবদলের টুলু। তবে অবৈধ দখলদারদের কোনো ধর্ম, দল, গ্রুপ নেই। দখলের সময়ে যুবদলের সঙ্গে ছাত্রলীগও মিলে যায়।’ তিনি আরো বলেন, ‘তদন্ত কমিটি হয়েছে। দখলদার যে দলেরই হোক তথ্য বের হবে। রানা প্লাজার মালিক রানার বিচার হচ্ছে, এ অপরাধীরও বিচার হবে।’
ঝিলপাড়ের এ এলাকাটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে। ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা সরদার ফায়সাল বাশার ফুয়াদ। তিনি আওয়ামী লীগের সমর্থনে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন। মুনীর সম্পর্কে জানতে চাইলে ফায়সাল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ঘটনার পর আমি মুনীরের নাম শুনেছি।’ তাঁর ওয়ার্ডে একাধিক মুনীর আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দলে একাধিক মুনীর আছে। কোন মুনীর তা আমি নিশ্চিত না। তবে অপরাধী যেই হোক আমি দোষী ব্যক্তির শাস্তি দাবি করি এবং অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে আমি ভবিষ্যতে কাজ করব।’
মুনীরের বিরুদ্ধে মামলা
আজ বৃহষ্পতিবার বিকেলে মুনীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার রামপুরা থানার পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করেছে।
রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘টিনের বাড়ি দেবে যাওয়ার ঘটনায় মুনীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।’ আসামীর পরিচয় সম্পর্কে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।