পঞ্চগড়ে শিশু গৃহকর্মীকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ
দিনাজপুরে জুঁই (১২) নামের এক শিশু গৃহকর্মীকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। শিশুটিকে হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়নি। আটদিন ধরে চিকিৎসার অভাবে যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মারা যায় শিশুটি।
মারা যাওয়ার পর শিশুটিকে রাতেই পরিবারের হাতে সোপর্দ করে তড়িঘড়ি করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়। বিষয়টি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
জুঁই পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার কুড়ালিপাড়া এলাকার জয়নাল আবেদীন জালালের মেয়ে। সে দিনাজপুরে অ্যাডরুক ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি আলমগীর আলম ও তাঁর স্ত্রী কুদরত উন নাহারের বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করত।
জানা গেছে, ১০ দিন আগে দিনাজপুরে বসবাসরত আলমগীর ও তাঁর স্ত্রী নাহার গরম পানি ঢেলে জুঁইকে হত্যার চেষ্টা করেন। তার শরীরের বুকের নিচ থেকে পা পর্যন্ত পুড়ে যায়। এতে শিশুটি অচেতন হয়ে পড়ে। অবস্থা বেগতিক দেখে ওই দম্পতি জুঁইকে বাসায় আটকে রেখে গোপনে চিকিৎসা দেন। শিশুটিকে কোনো হাসপাতালে ভর্তি করেননি। তার অভিভাবকদেরও জানাননি। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে শিশুটি পোড়ার ক্ষতের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে বৃহস্পতিবার সকালে মারা যায়।
মারা যাওয়ার পর আলমগীর বোদা উপজেলার ক্ষমতাসীন দলের যুবলীগের নেতাদের ম্যানেজ করে শিশুটিকে গ্রামের বাড়ি কুড়ালিপাড়ায় নিয়ে আসেন। সেখানে শিশুটির ঝলসানো বিকৃত চেহারা দেখে পরিবারের লোকজনসহ পাড়া-প্রতিবেশীরা চমকে ওঠেন। এ সময় ক্ষুব্ধ লোকজন আলমগীর ও তাঁর স্ত্রীকে আটকে রেখে উত্তমমধ্যম দেন। পরে যুবলীগ নেতা গোলাম ফারুক তাঁদের উদ্ধার করে সেখান থেকে নিয়ে আসেন।
ওই নেতারা তিন লাখ টাকায় দফারফা করে দিনাজপুর ও বোদা থানায় বিষয়টি না জানিয়ে লাশের ময়নাতদন্ত না করে তড়িঘড়ি করে বৃহস্পতিবার রাতেই শিশুটির লাশ দাফন করেন।
এ বিষয়ে আলমগীর আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, ‘জুঁইয়ের ওপর গরম পানি পড়ে যায়। পুলিশের হয়রানির ভয়ে শিশুটির কোনো চিকিৎসা করাইনি। এমনকি তার বাবা-মাকেও জানাইনি।’
স্থানীয় লোকজন জানান, শিশুটির পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে লাশের ময়নাতদন্ত করতে দেননি ফারুকসহ প্রভাবশালী নেতারা।
বিষয়টি পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মণ্ডল, পুলিশ সুপার মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদকে জানানো হয়। কিন্তু ঘটনাটি দিনাজপুরে হওয়ায় তাদের কিছুই করার নেই বলে জানান।
বোদা থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, এ বিষয়ে শিশুর অভিভাবকরা কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ দায়ের করলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
এ ব্যাপারে যুবলীগ নেতা গোলাম ফারুক সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মোবাইলে একাধিকবার কল করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি।