এখনো ক্ষতিপূরণের অপেক্ষায় ভুক্তভোগীরা
রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে রানা প্লাজা ধসের দুই বছর পরও ক্ষতিপূরণের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন ভুক্তভোগী শ্রমিক ও তাঁদের পরিবার। দীর্ঘ সময় পরও কারখানার মালিক ও ক্রেতাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল (পিএমআরএফ) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মতো কিছু সংস্থা রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ ব্যক্তিকে আর্থিক সহায়তা দিলেও আইন অনুযায়ী পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ পায়নি কেউই।
বাংলাদেশ শিল্প আইন-২০০৬ অনুযায়ী, (যা ২০১৩ সালে সংশোধিত হয়েছে) কর্মক্ষেত্রে মারা যাওয়া শ্রমিকের পরিবার সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পাবে। অন্যদিকে, স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যাওয়া শ্রমিক পাবেন দেড় লাখ টাকা। এ আইনে আরো বলা হয়েছে, সাময়িকভাবে কর্মক্ষম হওয়া শ্রমিকরা অক্ষম থাকাকালীন পর্যন্ত বা এক বছর পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। কোনো শ্রমিকের মৃত্যু হলে টাকার অঙ্কটা শ্রম আদালতে জানাবেন মালিক।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে নয়তলা ভবনটি ধসে কমপক্ষে এক হাজার ১৩৭ জন লোক নিহত হন, যাঁদের অধিকাংশই পোশাককর্মী। আহত হন দুই হাজার ৪০০ জন। এখনো নিখোঁজ আছেন বহু লোক। নয়তলার ওই ভবনে পাঁচটি পোশাক কারখানা ছিল।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, পিএমআরএফ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে প্রায় ২২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক ওই অর্থের পরিমাণ ২৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বলে সম্প্রতি দাবি করেছেন। পোশাকমালিক ও তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর দাবি, সংখ্যাটা ২৫ কোটি।
সরকার, মালিক ও ক্রেতাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ১৮৫ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে বিতরণ করেছে পিএমআরএফ ও আইএলও। তবে এ অর্থ দেওয়া হয়েছে কেবল ৭০ শতাংশ ভুক্তভোগীকে। ৩০ শতাংশ শ্রমিক এখনো কোনো অর্থই পাননি।
দুই বছরেও অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি
রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় তিনটি মামলা দায়ের করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), পুলিশ ও নিহত শ্রমিক জাহাঙ্গীরের স্ত্রী। কিন্তু অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এসব মামলায় এখনো অভিযোগপত্র দেয়নি।
ভবনের মালিক সোহেল রানার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ করে মামলা করেছে পুলিশ। অন্যদিকে কাঠামোগত ত্রুটি, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ভবন নির্মাণ ও ভবন নির্মাণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে রানা ও কারখানার মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করে রাজউক। নিহত শ্রমিক জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী শিউলী আক্তার ভবনের মালিক সোহেল রানা, পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নিউ ওয়েভ স্টাইলের চেয়ারম্যান বজলুস সামাদ আদনান ও সাভার পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলী ইমতেমাম হোসেন বাবুর বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। অভিযোগপত্রে থাকা রাষ্ট্রের কিছু কর্মকর্তার নাম অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে এখনো অনুমতি না পাওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তারা অভিযোগপত্র দিতে পারেননি।
রানা প্লাজায় থাকা পাঁচটি পোশাক কারখানার বেকার শ্রমিকদের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজিএমই। মাত্র ১৪০ জন শ্রমিককে চাকরি দিয়েছে সংগঠনটি। বিজিএমইএ তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেনি।
এদিকে, ভবনধসে ব্যাপক প্রাণহানির পরও এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কোনো আইন করেনি সরকার। কর্মপরিবেশ তদারকির জন্য প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি সংগঠন কেবল তৈরি পোশাক কারখানার নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখছে। কিন্তু অন্যান্য কারখানায় তাদের তদারকি নেই।