সকালে বিক্ষোভ, দুপুরে শিক্ষক বরখাস্ত

বিদ্যালয়ের সাবেক এক ছাত্রীর সঙ্গে অশালীন আচরণের অভিযোগে মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে দুপুরে এই সিদ্ধান্ত নেয় বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি।
অভিযোগ অস্বীকার করে ওই শিক্ষক বলেন, তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তিনি তাঁর পুরোনো ছাত্রীকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে দর্শনা চিনিকলে ঘুরতে গিয়েছিলেন। কোনো অশালীন আচরণ করেননি।
বরখাস্ত হওয়া ওই শিক্ষক বিএনপি সমর্থক হিসেবে পরিচিত।
আমঝুপি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন চুন্নু বলেন, বরখাস্ত হওয়া শিক্ষককে সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অভিযুক্ত শিক্ষক ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে ছাত্রীকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটেছে সে এ বছর আমঝুপি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে চুয়াডাঙ্গার একটি কলেজে ভর্তি হয়েছে। গত সোমবার সন্ধ্যার দিকে ওই ছাত্রীকে মোটরসাইকেলে বসিয়ে চুয়াডাঙ্গা শহরে ঘুরছিলেন স্কুলশিক্ষক। এ সময় চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের একটি দল তাদের আটক করে পরিবারের লোকজনকে খবর দেয়। পরে আমঝুপি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম ও ছাত্রীর বাবা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। পুলিশ ছাত্রীকে তার বাবার হাতে এবং ওই শিক্ষককে সাবেক চেয়ারম্যানের জিম্মায় মুক্তি দেন।
এদিকে এ ঘটনার পর থেকে আমঝুপি এলাকায় ব্যাপক কানাঘুষা ও উত্তেজনা শুরু হয়। শিক্ষক ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে।
আজ সকাল ৮টায় আমঝুপি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আমঝুপি সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে। তারা শিক্ষককে ধর্ষক দাবি করে তার বিচার চেয়ে বিদ্যালয়ে পোস্টারিং করে। সেই সঙ্গে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও আমঝুপি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বোরহান উদ্দিন চুন্নুর কাছে বিচার দাবি করে। এ সময় বোরহান উদ্দিন চুন্নু দুপুরে জরুরি সভা আহ্বান করে বিচার করার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে। খবর পেয়ে মেহেরপুর সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান পুলিশের একটি দল নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ ব্যাপারে আমঝুপি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুন ইসলাম বলেন, যেহেতু ছাত্রীর বাবা অভিযোগ করেছেন এবং বিষয়টি বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তাই বিদ্যালয়ের সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখার স্বার্থে ব্যবস্থাপনা কমিটি তাঁকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে সাতদিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ এবং তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ওই শিক্ষক বলেন, ‘আমার স্কুলের প্রাক্তন এক ছাত্রীর সঙ্গে দর্শনা সুগার মিলে বেড়াতে গিয়েছিলাম। ফিরে আসার সময় চুয়াডাঙ্গার কেদারগঞ্জ মোড়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে দুজন বখাটে চাঁদা দাবি করে। তাদের চাঁদা না দেওয়ায় তারা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ছাত্রীর সঙ্গে আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে। পরে চুয়াডাঙ্গার সহকারী পুলিশ সুপার আমাদের কথা শোনার পর ছেড়ে দেন। কিন্তু আমার এলাকায় এটা নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা শুরু করে ছাত্রীর পরিবার ও স্কুলের ছেলেমেয়েদের ফুঁসলিয়ে আজ আমার চাকরি নিয়ে টানাটানি শুরু করেছে।’
শিক্ষক বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিক। আপনাদের লেখনীতে অনেক কিছু হয়। দয়া করে সত্যটা উপস্থাপন করে আমাকে বাঁচান।’
এ ব্যাপারে জানতে ওই ছাত্রীর বাসায় গেলে পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে কোনো কথা বলতে দেননি। এমনকি নিজেরাও কোনো বক্তব্য দেননি।
তবে ছাত্রীর বাবা লিখিত অভিযোগে বলেন, তাঁর মেয়ে চুয়াডাঙ্গার একটি কলেজে পড়ে এবং সেখানকার একটি ছাত্রীনিবাসে থাকে। গত সোমবার ওই শিক্ষক তাঁর মেয়েকে প্রলোভন দেখিয়ে মোটরসাইকেলে বসিয়ে ছাত্রীনিবাস থেকে বেরিয়ে পড়েন। পথে তাঁর মেয়ের সঙ্গে অশালীন আচরণ ও অসামাজিক কার্যকলাপ করেন। বিষয়টি চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় জনগণের দৃষ্টিগোচর হলে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় জানানো হয় এবং পুলিশ তাদের আটক করে।
আমঝুপি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি বোরহান উদ্দিন চুন্নু বলেন, ছাত্রীর বাবা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তাঁর মেয়ের সঙ্গে অশালীন আচরণ করার লিখিত অভিযোগ করেন এবং আজ সকালে শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে বিচার চায়। যেহেতু বিদ্যালয়ের সুনামের ব্যাপার, তাই ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে আমঝুপির কয়েকজন অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করা প্রয়োজন। যেহেতু এখানে একজন মানুষের জীবন-জীবিকা ও মানসম্মান জড়িত। সে হিসেবে তদন্ত যাতে কোনো পক্ষের সমর্থনে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন।