শিক্ষককে বরখাস্ত করার পরও শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

সহকারী শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করার পরও মেহেরপুরের আমঝুপি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আজ বুধবার বিদ্যালয়ের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে।
এ সময় মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের দুই পাশের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। চুয়াডাঙ্গায় বিজিবি ৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আমির মজিদের গাড়িবহর সেই অবরোধে আটকা পড়ে। তিনি মুজিবনগরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সঙ্গে একটি পতাকা বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন।
আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গেটের সামনের সড়কে এ ঘটনা ঘটে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্কুলে কোনো ক্লাস না করিয়ে সাধারণ ছুটি দেওয়া হয়।
এদিকে অভিযোগ ওঠা শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্ত কমিটি গঠন করার পরও শিক্ষার্থীরা কীভাবে বা কাদের ইন্ধনে আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছে সে নিয়ে এলাকার অভিভাবকদের মধ্যে সমালোচনা শুরু হয়েছে। প্রধান শিক্ষক মামুন ইসলামের ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন অনেকে। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যর্থতার দায়ে শিক্ষা বিভাগ ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুন ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি অনেকটা ক্ষিপ্ত হয়ে যান। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় লোকজন জানান, আজ সকালে আমঝুপি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সমাবেশ (পিটি) শেষে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে প্রবেশ না করে বিদ্যালয়ের গেটের সামনের সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় তারা প্রাক্তন এক ছাত্রীর সঙ্গে সহকারী শিক্ষকের অশালীন আচরণের অভিযোগ তুলে তার শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন চুন্নু এবং সদর থানার পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভ দূর করে।
চুয়াডাঙ্গায় বিজিবির ৬ ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আমির মজিদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘মুজিবনগর যাওয়ার পথে আমঝুপিতে ছাত্রদের অরোধের মুখে পড়ি। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করলে আমরা গন্তব্যস্থলের উদ্দেশে রওনা দিই।’ তিনি ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন চুন্নুও এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, খবর পেয়ে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি সামলে চলে আসার পর শুনি আবারও সড়কে আগুন জ্বালিয়ে তারা অবরোধ করেছে। পরে আবার সেখানে গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে পরামর্শ স্কুল ছুটি দেওয়া হয়। তবে পরবর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হবে তিনি কেন শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না।
মেহেরপুর সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসনে মোবারক জানান, খবর পেয়ে বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পরে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে বিদ্যালয়ে ক্লাস না করিয়ে ছুটি দেওয়া হয়েছে বলে প্রধান শিক্ষক তাঁকে জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র গোলদার বলেন, এ ব্যর্থতার দায় অবশ্যই প্রধান শিক্ষককে নিতে হবে। তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং শোকজ করা হবে।
প্রসঙ্গত, প্রাক্তন এক ছাত্রীর সঙ্গে অশালীন আচরণের বিচার চেয়ে তার বাবা বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে আবেদন করে। একই দাবিতে মঙ্গলবার সকালে স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। পরে দুপুরে ব্যবস্থাপনা কমিটি জরুরি সভা করে অভিযোগ ওঠা শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করে। একই সঙ্গে আগামী সাতদিনের মধ্যে ওই শিক্ষকের কাছে জবাব চাওয়া হয় এবং তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।