নিরোধ কমিটির সদস্য দিলেন বাল্যবিবাহ

ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য তিনি। সেই সঙ্গে গ্রামের বাল্যবিবাহ নিরোধ কমিটির সদস্য। সেই তিনিই নিজের অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে বিয়ে দিতে যাচ্ছিলেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে সেই বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছেন এবং ইউপি সদস্য, বর ও বিবাহ নিবন্ধককে (কাজি) এক হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন।
আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার দারিয়াপুর ইউনিয়নের দারিয়াপুর গ্রামে এই অভিযান চালানো হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস গ্রামের ওবায়দুল হকের ছেলের সঙ্গে একই উপজেলার দারিয়াপুর ইউপির সদস্য ও দারিয়াপুর গ্রামের বাসিন্দা তারা মিয়ার দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়। আজ ওই বিয়ে হওয়ার খবর পেয়ে মেহেরপুরের সহকারী কমিশনার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফ হোসেনের নেতৃত্বে তারা মিয়ার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় বিয়ের আসর থেকে বর, কনের বাবা ও কাজিকে আটক করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের তিনজনকে এক হাজার টাকা করে জরিমানা করেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফ হোসেন জানান, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ১৯২৯ সালের ৪ ধারা মোতাবেক তাঁদের এই রায় দেওয়া হয়।
সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মইনুল হাসান জানান, মেহেরপুর জেলায় যেন আর কোনো বাল্যবিবাহ না হয় এ লক্ষ্যে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে জেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের বিশেষভাবে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। এর পরও যদি এমন সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
দারিয়াপুর ইউপির চেয়ারম্যান তৌফিকুল বারী বকুল বলেন, ‘আমি যেদিন চেয়ারম্যান হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলাম, তখন থেকেই আমার ইউনিয়নে কোনো বাল্যবিবাহ যাতে না হয় সেই অঙ্গীকার করেছি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়, আমার ইউপির একজন সদস্য কীভাবে তাঁর নিজের মেয়েকে বাল্যবিবাহ দিতে পারেন।’
চেয়ারম্যান তৌফিকুল বারী বকুল আরো বলেন, ‘ইউপি সদস্য তারা মিয়া দারিয়াপুর গ্রামের বাল্যবিবাহ নিরোধ কমিটির একজন সদস্য। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, আমাদের না জানিয়ে গোপনে তাঁর নাবালিকা মেয়ের বিয়ের আয়োজন করেন। আগে জানতে পারলে কখনোই আমরা এই বিয়ের আয়োজন করতে দিতাম না। আমি অনেক লজ্জিত এমন ঘটনার জন্য। তাঁর যথাযথ শাস্তি হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।’
মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ জানান, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। রোববার অফিস চালু হলেই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ধরনের অপরাধ কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। যেকোনো মূল্যে মেহেরপুর জেলায় কোনো বাল্যবিবাহ দেওয়া হবে না।’