কুড়িগ্রামের খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার অপসারণের দাবি
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার সরকারি খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ফজলুল হকের অপসারণের দাবি জানিয়েছেন মিল ও চাতালমালিকরা। তাঁকে অপসারণ না করা পর্যন্ত আসন্ন বোরো সংগ্রহ অভিযানে ধান-চাল সরবরাহ চুক্তি না করার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।
আজ বৃহস্পতিবার নাগেশ্বরী উপজেলার মিল-চাতালমালিক সমিতি এক জরুরি বৈঠকে এ ঘোষণা দেয়। এতে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এরই মধ্যে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার অপসারণের দাবিতে খাদ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মিল-চাতালমালিকরা। এ ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মিল-চাতালমালিকরা জানান, মো. ফজলুল হক দুই বছর আগে নাগেশ্বরী উপজেলার খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। গত ২০১৩-১৪ এবং ২০১৪-১৫ বোরো ও আমন সংগ্রহ মৌসুমে নিজের পারিবারিক অসুবিধা এবং খাদ্য সরবরাহে মিলারদের সুবিধা দেওয়ার কথা বলে কিছুসংখ্যক মিলারের কাছ থেকে প্রায় আট লাখ টাকা ধার নেন। পরে তা পরিশোধের কথা থাকলেও নানা অজুহাতে পরিশোধ করেননি। এ ছাড়া বোরো মৌসুমে ধান ও চালের গুণগত মান থাকা সত্ত্বেও মিলমালিকদের কাছ থেকে বস্তাপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা আদায় করেন। মিলাররা টাকা দিতে আপত্তি জানালে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে চাল ফেরত দেন। এর আগে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার জয়মনির হাট খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনকালে ফজলুল হক ভুয়া বিল করে ১০ লাখ ৩৫ হাজার ১০০ টাকা আত্মসাৎ করেন। পরে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের ওপর দোষ চাপিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেন।
মিলমালিকরা অভিযোগ করেন, সরকারি কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও ফজলুল হক নামে-বেনামে নিজস্ব পরিবহনে টিআর, জিআর ও কাবিখা খাতের মালামাল কেনাবেচা করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
এ ব্যাপারে নাগেশ্বরী উপজেলার মিলমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের সরকার অভিযোগ করেন, ‘ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তা ফজলুল হক একজন ধুরন্দর ও দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি। তাঁর স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মে আমাদের ব্যবসা লাটে ওঠার উপক্রম হয়েছে। বাধ্য হয়ে তাঁর অপসারণের দাবিতে উপজেলার ৭০ মিল-চাতালমালিকের মধ্যে ৬৬ জন স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া হয়েছে। আমরা দ্রুত তাঁর অপসারণ চাই। এ কর্মকর্তাকে অপসারণ না করলে আসন্ন ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে সরকারের সাথে কোনো চুক্তি করা হবে না।’
খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা ফজলুল হক বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ষড়যন্ত্রমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
নাগেশ্বরীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হায়াত মো. রহমতুল্লাহ জানান, খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাকে প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে তদন্তকাজ সম্পন্ন হয়েছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আশরাফুজ্জামান জানান, ফজলুল হকের বিরুদ্ধে মিল-চাতালমালিকদের স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগের ভিত্তিতে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে খাদ্য পরিদর্শক আবদুল করিম ও নাজমুল হোসেনের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।