মানবতাবিরোধী অপরাধে সন্তু লারমার বিচার দাবি
শোক, শ্রদ্ধা আর হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবির মধ্য দিয়ে পাকুয়াখালী ট্র্যাজেডি দিবস পালন করেছে পার্বত্য রাঙামাটির লংগদু উপজেলার বাঙালিরা।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর প্রায় ২৪ বছরের সশস্ত্র সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের এক বছর আগে ১৯৯৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর লংগদু উপজেলার পাকুয়াখালী এলাকায় ৩৫ জন বাঙালি কাঠুরিয়াকে গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র শাখা শান্তিবাহিনী। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়। ওই ঘটনার পর থেকে বাঙালিরা দিনটিকে পাকুয়াখালী ট্র্যাজেডি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
দিনটি উপলক্ষে আজ শুক্রবার লংগদু উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
পার্বত্য বাঙালি সংগঠনগুলোর উদ্যোগে ৩৫ কাঠুরিয়া হত্যাকাণ্ড দিবস বা পাকুয়াখালী ট্র্যাজেডি দিবস পালন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ২০ বছর পরও আজ পর্যন্ত সেই খুনিদের কোনো বিচার হয়নি। বিচারের বাণী যেন নিভৃতে কাঁদে। উপরন্তু সরকার খুনিদের পুরস্কৃত করে এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এই ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য একটি কলঙ্কজনক ঘটনা।
বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি সশস্ত্র ক্যাডারদের সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচারের দাবি জানিয়ে নিহত বাঙালি পরিবারদের পুনর্বাসন করার দাবি জানান। তাঁরা পাকুয়াখালী হত্যাকাণ্ডসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩০ হাজার বাঙালিকে খুনের জন্য সন্তু লারমাকে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধী’ দাবি করে তাঁর বিচার দাবি করেন।
বক্তারা আরো বলেন, সম্প্রতি পার্বত্য ভূমি কমিশন আইন সংশোধনের নামে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালিদের বিতাড়নের আরেকটি নীল নকশা তৈরি করেছে। শুধু তাই নয়, কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসা জমিও পাহাড়িদের ভাগ করে দেওয়া হবে- সরকারের এমন বক্তব্য আত্মঘাতী ঘোষণা ছাড়া আর কিছুই নয়।
সমধিকার আন্দোলন লংগদু উপজেলা শাখার সহসভাপতি এম এ হালিমের পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন লংগদু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তোফাজ্জল হোসেন।
সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ লংগদু উপজেলা শাখার সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন, পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাব্বির আহম্মেদ।
লংগদু উপজেলা সমধিকার আন্দোলনের সভাপতি মো. খলিলুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন লংগদু উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মো. নাছির উদ্দিন, গুলশাখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আবু নাছির, সমধিকার আন্দোলন রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবছার আলী, কালাপাকুজ্জা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবদুল বারেক দেওয়ান, লংগদু উপজেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা আমিনুর রশীদ, সম-অধিকার ছাত্র আন্দোলন, লংগদু উপজেলা শাখার সভাপতি মো. রাকিব হাসান।
সমাবেশে বক্তারা গণহত্যার জন্য সন্তু লারমার বিচার দাবি করে ভূমি কমিশন সংশোধন আইনকে অবৈধ এবং কালো আইন বলে আখ্যা দেন। তাঁরা পার্বত্য ভূমি কমিশনে সন্তু লারমার নেতৃত্বকে মেনে নেবেন না বলেও হুঁশিয়ার করে দেন।
বক্তারা আরো বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাহাড়িরা দেশের স্বাধীনতা না মেনে তারা পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করেছিল। প্রকৃত পক্ষে তারাও রাজাকার। তাই মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সন্তু লারমা গংদেরও বিচার হতে হবে।
বক্তারা নিরপেক্ষ ভূমি কমিশনে তিন পার্বত্য জেলার তিন জেলা প্রশাসক ও নির্বাচিত বাঙালি জনপ্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে বলেন, তাঁরা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি না। তাঁরা তাঁদের অধিকার বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন করছেন।
বক্তারা বলেন, তৎকালীন শান্তিচুক্তির সময় সন্তু বাহিনী বলেছিল অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। কিন্তু এখনো দেখতে পাচ্ছেন পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি। পাহাড়ি অস্ত্রধারী গোষ্ঠীর কাছে সাধারণ পাহাড়ি-বাঙালি কেউ নিরাপদ নয়।
তাঁরা আরো বলেন, সংবিধানে সন্তু লারমা ও তাঁর দল উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি নিলেও এখন তারা পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার উদ্দেশ্যে নিজেদের আধিবাসী বলে দাবি করছে। অথচ জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী এশিয়া মহাদেশে কোনো আদিবাসী নেই।
এর আগে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ ও সম-অধিকার আন্দোলন লংগদু উপজেলা শাখার উদ্যোগে উপজেলা সদরে শোক মিছিল বের করা হয়। এটি প্রধান সড়ক ঘুরে উপজেলা রেস্টহাউস-সংলগ্ন ৩৫ কাঠুরিয়ার গণকবর জিয়ারত ও দোয়া মোনাজাতে মিলিত হয়।
শহীদ কাঠুরিয়াদের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করেন উপজেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা আমিনুর রশীদ। পরে উপজেলা চত্বরে বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।