তোমাদের বাড়ির ইট থাকবে না : শামীম ওসমান
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তাঁর সহযোগীদের বাড়ির ইট খুলে ফেলার হুমকি দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। তিনি বলেছেন, ‘যদি আমি চোখের পলক ফেলি আমার কর্মীদের দিকে তাকিয়ে যে কষ্ট পাচ্ছি। তোমাদের বাড়ির ইট থাকবে না। পাঁচ মিনিটের মধ্যে সকল শক্তিকে মোকাবিলা করে বাড়ির ইট খুলে রাখার ক্ষমতা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাখে।’
আজ শনিবার বিকেলে শহরের চাষাঢ়া শহীদ মিনারে নতুন গ্যাস সংযোগের উদ্বোধন অনুষ্ঠান উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় শামীম ওসমান এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শামীম ওসমানের বড় ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।
urgentPhoto
অনুষ্ঠানে শামীম ওসমান বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের মানুষকে যে নামে বাংলাদেশের মানুষ চেনে, বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জ। সেই বন্দর নগরী নারায়ণগঞ্জকে প্রকৃতভাবে, আর্থিকভাবে, সার্বিকভাবে পরিপূর্ণ করার জন্য যেই ব্রিজের তিনি চেষ্টা করেছিলেন সবাই বলেছেন কোনো এক মহিলা এবং সেই সাথে কিছু সুশীল কুশীল আছে, যাঁরা এই গ্যাসের লাইনটা নিয়ে খেলেছেন আমি তাঁদের নাম বলতে চাই না। আমি তাঁদের বিষয়েও বলতে চাই না। শুধু এইটুকু জানাতে চাই, গ্যাস লাইন নিয়ে তাঁরা শুধু খেলেন নাই। তারা শীতলক্ষ্যা সেতু যাতে হতে না পারে বারংবার বারংবার পয়সা খরচা করে এই ডিজাইন বদলে দিয়েছেন। এই ব্রিজ যাতে না পারে বারবার ঢাকায় যোগাযোগ করে, কিছু সংখ্যক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে দিয়ে বলেছে, ডিজাইনে ত্রুটি আছে, মাটিতে প্রবলেম আছে। এইভাবে মিনিমাম দুই থেকে আড়াই বছর এই ব্রিজটা আটকে রাখা হয়েছিল। যখন স্বাভাবিকভাবে গ্যাসের লাইনটি আটকাতে পারছিল না তখন এক কাউন্সিলরকে দিয়ে, ওই এলাকার দুই-একজন ব্যবসায়ীকে দিয়ে একটি মামলা করে সময় নষ্ট করে।’
সুশীলসমাজের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই নেতা বলেন, ‘যাদের আঁতে ঘা লেগেছিল, আমাকে যারা ২০ কোটি টাকা অফার করেছিল শুধু চুপ করে থাকার জন্য, যারা নারায়ণগঞ্জে মা-বোনের সম্ভ্রম বিক্রি করত, যারা মা বোনের সম্ভ্রম বিক্রি করে টাকার পাহাড় গড়েছিল এ রকম ঢাকার কিছু কিছু সুশীল সমাজের লোক, যারা মুখোশ পরে থাকেন, যারা কিছু কিছু বড় বড় পত্রিকার মালিকের বউ, যারা টক শো এসে মুখের মেকআপ দিয়ে সুন্দর সুন্দর কথা বলতে চেষ্টা করেন জননেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, সেই টক শো ওয়ালারা সেদিন এনজিওর ভূমিকায় ছিলেন এবং নারায়ণগঞ্জের পতিতালয় যাতে না ওঠে সেই জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন।’
শামীম ওসমান দাবি করেন, ‘আমরা, আমি যখন (১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল) নারায়ণগঞ্জের এমপি ছিলাম ২৬ শ কোটি টাকার কাজ করেছি। বাংলাদেশে গোপালগঞ্জের চেয়েও বেশি কাজ আমি করতে পেরেছিলাম। আমার নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমেই। আমার কোনো শক্তি নাই। আমার একটাই শক্তি। ওপরে আল্লাহর রহমত এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার দোয়া।’
জাতীয় পার্টির প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের মৃত্যু প্রসঙ্গে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমার ভাইয়ের মৃত্যুটা স্বাভাবিক ছিল না। কিছুটা অস্বাভাবিক ছিল। কারণ তাঁকে বিভিন্নভাবে মানসিকভাবে আঘাত করা হয়েছে। মানুষ রাজনীতি করে দুটো কারণে। দেশের সেবার জন্য। আর একটি নিজের সম্মানের জন্য। তাঁর সম্মানের ওপরে, আমাদের পরিবারের সম্মানের ওপরে আঘাত করা হয়েছে।
আমার ভাইয়ের মৃত্যুর পর দশদিন না যেতেই, সাংবাদিক ভাইয়েরা আপনারা সাক্ষী, নারায়ণগঞ্জে কিছু নাস্তিক আছে, যারা দেশের মানুষকে নিয়ে বড় বড় কথা বলেন। ঢাকা থেকে তাদের নেতাদের আমদানি করে নিয়া আসা হইছিল। ওমুনিস্ট-কমিউনিস্ট কিছু আছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন সিটিতে ইলেকশন করছে, জামানত একবার যায় নাই, পাঁচ শ বার জামানত গেছে, ছয় হাজার ভোটও পায় নাই।
ওরা বলে দেশের চেহারা বদলায়া ফালাবে। কী বড় বড় কথা। টকশোতে। সেই সব লোকদের নিয়ে এসে আমাদের বিরুদ্ধে অনেক কথা বলা হয়েছে। বলেন, আপত্তি নাই। আমার বিরুদ্ধে বলেন, কোনো আপত্তি নাই। কুনু কষ্ট পাই না। বলবেনই তো, সমস্যা নাই। কিন্তু আমার মৃত ভাই নাসিম ওসমানকে নিয়ে কথা বলা হয়েছে। এবং শুধু বলা হয় নাই। কী অপরাধ করেছে নারায়ণগঞ্জবাসী? যে আমার ভাইয়ের মরণোত্তর বিচার করতে হবে। আমি আপনাদের কাছে জানতে চাই। কী অপরাধ করেছি আমরা যে মৃত মানুষ তার ৪০ দিন হয় নাই, তাকে বলা হচ্ছে মরণোত্তর বিচার করা হবে।
যারা বলছেন তারা জানেন, তাদের ক্ষমতা কতদূর। আমি আমার বড় ভাই সেলিম ওসমান না। আমি আমার বড় ভাই নাসিম ওসমান না। আমি শামীম ওসমান। যদি আমি চোখের পলক ফেলি আমার কর্মীদের দিকে তাকিয়ে, যে কষ্ট পাচ্ছি। তোমাদের বাড়ির ইট থাকবে না। পাঁচ মিনিটের মধ্যে সকল শক্তিকে মোকাবিলা করে বাড়ির ইট খুলে রাখার ক্ষমতা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাখে।’
নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি এবং বিকেএমইএর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মঞ্জুরুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নওশাদ ইসলাম, শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ, নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, জেলা আওয়ামী লীগের নেতা অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রমিক উন্নয়ন ও কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কাউসার আহমেদ পলাশ, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদ বাদল, শাহ নিজাম, জেলা জাসদের সভাপতি আবদুস সাত্তার, কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না প্রমুখ।