শিশুটির শরীরজুড়ে শুধু নির্যাতনের দাগ
প্রায় এক বছর আগে গাজীপুরে এক বাসায় কাজ করার জন্য আনা হয়েছিল জান্নাতুল ফেরদৌসকে (৯)। ওই এক বছর মায়ের দেখা পায়নি শিশুটি। গত বুধবার জান্নাতুলের মা ফিরোজা বেগম চাঁদপুরে নিজ বাড়ির সামনে পড়ে থাকতে দেখেন মেয়েকে। এ সময় জান্নাতুলের ছোট্ট শরীরজুড়ে ছিল শুধু নির্যাতনের দাগ। এমনকি মাথায় রয়েছে গুরুতর আঘাত।
শিশু জান্নাতুল ফেরদৌসের বাড়ি চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার নয়ানী গ্রামে। তার বাবার নাম মন্টু মাতব্বর। জান্নাতুল এখন হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
জানা যায়, হাইমচরের মোস্তফা সরদার নামে এক ব্যক্তি টাকার প্রলোভন দেখিয়ে জান্নাতুলকে গাজীপুর নিয়ে আসেন কাজ করানোর জন্য। মোস্তফা গাজীপুরে তাঁর শ্যালিকা মনি বেগম ও তাঁর স্বামী ওমর ফারুকের বাসায় কাজ করতে দেন জান্নাতুলকে। ওই এক বছর নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয় শিশুটি। শরীরে ইলেকট্রিক যন্ত্র দিয়ে নির্যাতন চালানো হতো বলে জানায় জান্নাতুল। জান্নাতুলের মাথায় বড় ধরনের আঘাতের দাগ। টাইলসের সঙ্গে শিশুটির মাথা একাধিকবার আঘাত করা হয়।
গতকাল বুধবার মোস্তফা সরদারকে আটক করেছে পুলিশ। এ ব্যাপারে একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতিও চলছে।
মোস্তফা সরদার বলেন, ‘জান্নাতুল ফেরদৌসকে আমার শ্যালিকার বাসায় কাজ করতে দেই। প্রথমে ভালোই ছিল। হঠাৎ করে আমার শ্যালিকার টাকা-পয়সা বেশি হয়ে যায়। এতে ওদের অহংকার বেড়ে যায়। এরপরই শিশুটির ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়।’
‘আমার শ্যালিকা মনি আমাকে খবর দিয়ে আহত অবস্থায় শিশুটিকে আমার কাছে দিয়ে দেয়। আমি সাতদিন ধরে ঢাকায় জান্নাতুলের চিকিৎসা করাই। এরপর গতকাল তাদের বাসায় পৌঁছে দেই’, যোগ করেন মোস্তফা।
জান্নাতুলের মা ফিরোজা বেগম বলেন, ‘আমি বড় অসহায়। আমার স্বামী আমাদের কোনো খোঁজ-খবর নেয় না। সে থেকেও যেন নেই। আমার বৃদ্ধ মা ভিক্ষা করে আমার ও সন্তানদের দুবেলা খাবার জোগান দেন। আমার এ অসহায় অবস্থা দেখে মোস্তফা সরদার আমাকে মিথ্যে আশ্বাস দেখিয়ে আমার মেয়ে ভালো থাকবে বলে ঢাকায় তার স্বজনদের বাসায় নিয়ে যায়। এক বছর ধরে আমি আমার মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলেও তারা যোগাযোগ করতে দেয়নি। গত ১৪ সেপ্টেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় মোস্তফা সরদার আমার মেয়েকে বাড়ির সামনে রেখে চলে যায়।’
হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক দীপন দে বলেন, ‘গতকাল বুধবার রাত পৌনে ১০টার দিকে শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে নির্যাতন করা হয়নি। টাইলসের সঙ্গে শিশুটির মাথায় একাধিকবার আঘাত করা হয়।’
দীপন দে আরো বলেন, ‘শিশুটির অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বোর্ড থেকে যতদিন পর্যন্ত পুরোপুরি সুস্থ না হবে ততদিন পর্যন্ত তার চিকিৎসা আমরা চালিয়ে যাব। উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে তারও ব্যবস্থা নেব।’
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার শামছুন্নাহার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুর হোসেন পাটওয়ারী জান্নাতুলকে হাসপাতালে দেখতে যান এবং তার উন্নত চিকিৎসার প্রতিশ্রুতি দেন।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার শামছুন্নাহার বলেন, ‘খবরটি জানামাত্র শিশুটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তার সর্বোচ্চ চিকিৎসার জন্য যেখানে নেওয়া দরকার আমরা সেখানে নিয়ে যাব। এ ছাড়া মোস্তফা সরদারকে আটক করেছি। একই সঙ্গে গাজীপুর পুলিশের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই মনি বেগম ও ওমর ফারুক আটক হবে।’