পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু
দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে পটুয়াখালীর পায়রায় এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ। প্রথম ধাপের ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ।
এ লক্ষ্যে গত ২৯ মার্চ বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ঠিকাদার নিয়োগের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। অতিসম্প্রতি মূল প্লান্টের নির্মাণকাজ শুরু হবে। অচিরেই মূল কাজের শুভ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৯ সালের মধ্যে এখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হওয়ার কথা রয়েছে।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার রামনাবাদ নদীর মোহনায় পায়রা সমুদ্রবন্দরের পাশেই নির্মিত হচ্ছে দেশের বৃহত্তম পায়রা ১৩২০ মেঘাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় বাংলাদেশের নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) মধ্যে চুক্তি হয় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের।
প্রায় ১২ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ের এর ৮০ শতাংশ ঋণ দেবে চীনের এক্সিম ব্যাংক ও চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়া, চীন ও অস্ট্রেলিয়া থেকে খুব সহজেই কয়লা আমদানি করা হবে এখানে।
আন্ধারমানিক নদীতীরের ধানখালী ইউনিয়নে এক হাজার একর জমির ওপর তৈরি হবে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র। আড়াই হাজার শ্রমিকের বিশাল কর্মযজ্ঞ এখানে, দিনরাত সমানতালে কাজ করে মাটি ও বালু ভরাট করে প্রথম ধাপের কাজ প্রায় শেষ। নদীর তীররক্ষার জন্য বেড়িবাঁধ এবং ব্লক তৈরির কাজ চলছে দ্রুত। পুরো প্রকল্পটি তদারকি করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
এরই মধ্যে কলাপাড়ায় পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভূমি উন্নয়নের কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে দ্বিতীয় ধাপের কাজ। দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে এসব কর্মকাণ্ড। প্রকল্প এলাকায় বেড়িবাঁধ ও বালু ভরাট, হেলিপ্যাড, ওয়াচ টাওয়ার ও ভিভিআইপি গেস্টহাউস নির্মাণসহ প্রথম ধাপের কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের কাজকে ঘিরে ধানখালী ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়ায় প্রকল্প এলাকায় চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। আগামী ২০১৯ সালের মধ্যেই প্রকল্পটি চালু করে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ লক্ষ্যে বর্তমানে চীনের দেড় শতাধিক শ্রমিক টেস্ট পাইলিং ও মাটি প্রটেকশনের কাজ করছেন। বিদেশি শ্রমিকসহ সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বসানো হয়েছে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প। পায়রা সমুদ্রবন্দরসহ বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে এ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশের ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ এবং চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি) যৌথভাবে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু করে। প্রায় এক হাজার দুই একর ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়ন কর বাবদ ‘ল্যান্ড অ্যাকুইজেশন, ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড প্রটেকশন ফর পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট’ শীর্ষক এ প্রকল্পটি ২০১৯ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে। প্রকল্প এলাকায় মধুপাড়া ও নিশানবাড়িয়া মৌজার মরিচবুনিয়া, দাসের হাওলা, মাছুয়াখালী, গরাৎ খাঁ, চর নিশানবাড়িয়া ও মধ্য দাসের হাওলা গ্রামের ১৩৫টি বাড়িঘর ছিল। এগুলো এরই মধ্যে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া গ্রামগুলোর অন্তত এক হাজার ২০০ পরিবারের প্রায় এক হাজার একর কৃষিজমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু ভরাট, চারপাশের বাঁধ নির্মাণ কাজ প্রায় ৭০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। বাউন্ডারি ওয়াল, মাটি প্রটেকশন, টেস্ট পাইলিং, রামনাবাঁধ নদীসংলগ্ন অস্থায়ী জেটি ও ক্ষতিগ্রস্তদের আবাসনের কাজ চলছে। এ জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে চীনের শ্রমিকরা বিরামহীনভাবে কাজ করছেন।
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকৌশলী টম বলেন, ‘পরিকল্পনা অনুসারে শ্রমিকরা এখানে কাজ করছে। এখানকার পরিবেশ খুবই ভালো, এলাকার মানুষও সহযোগিতা করছে। আমাদের কাজে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’
প্রকল্পের উপপ্রকৌশলী মো. নাজমুল হক জানান, দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। প্রতিদিন চীনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কাজের বিষয়ে আলোচনা হয়।
বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের সহকারী প্রকৌশলী জর্জিস তালুকদার জানান, প্রকল্প এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের আবাসনের কাজ চলছে। আগামী এক বছরের মধ্যে ১৩৫টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। ২০১৯ সালের মধ্যেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
নির্ধারিত সময়ে নির্মাণকাজ শেষ করে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ মূল গ্রিডে সরবরাহ করতে পারবে বলে মনে করেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।