ছেঁউড়িয়ায় লালন শাহ স্মরণ চলছে
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2016/10/17/photo-1476677650.jpg)
পয়লা কার্তিক বাউলসম্রাট ফকির লালন শাহর ১২৬তম তিরোধান দিবস। ১২৫ বছর আগে তিনি এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন।
লালন মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভাসহ বর্ণাঢ্য নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এবং লালন একাডেমির তত্ত্বাবধানে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ার লালন আখড়া অসংখ্য লালন ভক্ত-অনুসারীর পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছে। ফকির লালন শাহর গান, বাউলমেলা, অলোচনা সভা ও সাধু সংঘের মধ্য দিয়ে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ায় তিনদিনব্যাপী চলছে এ উৎসব।
ভক্ত-অনুসারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাঁচদিনের এই অনুষ্ঠান সংকুচিত করে তিনদিন করা হলেও লালনভক্ত-অনুসারীদের হৃদয়ে যেন ১০ দিনের চেয়েও বেশি অনাবিল আনন্দ দিচ্ছে এবারের এ লালন স্মরণোৎসব।
উৎসবের পরিধি কমানো হলেও ভক্ত-অনুসারীদের আত্মিক অনুভূতিতে বিন্দুমাত্র কমতি নেই। লালনের ভাব-দর্শনসহ তাঁর মানবসেবার বৈশিষ্ট্যগুলো হৃদয়ে ধারণ করেই তার ভক্ত-অনুসারীরা প্রতিবছরের মতো এবারও এসেছেন আখড়াবাড়িতে। এবারের ভিন্নতা উপলব্ধিও করেছেন এ অনুষ্ঠানে আগত ভক্ত-অনুসারীরা। পূর্ণিমাকে ঘিরে দোল পূর্ণিমার অনুষ্ঠান হলেও এবারের প্রয়াণ দিবসেও আকস্মিকভাবেই পূর্ণিমার আবির্ভাব ঘটে এই মরমি সাধকের প্রয়াণ দিবসের স্মরণোৎসবে। তাই তাঁর ভক্ত-অনুসারীদের হৃদয়ে এ যেন এক নতুন মাত্রা। এমন অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন লালন গবেষক ফকির হৃদয় শাহ ও লালন মাজারের প্রধান খাদেম ফকির মোহাম্মদ আলী শাহ। আত্মিক প্রশান্তি নিয়ে তাঁরা লালন আখড়াবাড়িতে এসে বেশ খুশি আর এবারের সমাগমকে অন্যবারের চেয়ে বেশি মূল্যায়ন করেছেন মাজারে থাকা ভক্ত-অনুসারীরা।
দর্শনাথীরাও লালন আখড়ায় এসে অন্যবারের চেয়ে বেশ খুশি এমনটাই জানান পরিবার নিয়ে লালন মাজারে বেড়াতে আসা দর্শনার্থী নাজমা সুলতানা।
এবার লালন স্মরণোৎসবকে আরো প্রাণবন্ত করেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের পাশাপাশি তাঁর সঙ্গে আসা বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত মারিও পালমা। তাঁরা খুশি এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে।
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ার কালী নদীর তীরেই লালন স্মরণোৎসব উপলক্ষে বসেছে লালন মেলা। রাতে লালন মঞ্চে চলছে সাঁইজির জীবনকর্ম নিয়ে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আর এ সার্বিক স্মরণোৎসব নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে সব ধরনের ব্যবস্থা। এমন দৃঢ়তা প্রকাশ করেছেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি মো. জহির রায়হান ও পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম।
মরমি সাধক লালনের জীবনকর্ম, জাতহীন মানব দর্শন, অসাম্প্রদায়িক চিন্তাচেতনার আদর্শিক বিষয় নিয়েই চলে আসছে প্রতিবছর এ স্মরণোৎসব। বাংলা ১২৯৭-র পয়লা কার্তিক ইংরেজি ১৭ অক্টোবর ১৮৯০ সালে কুষ্টিয়া শহরতলির ছেঁউড়িয়ার লালন সমাধি প্রাঙ্গণে মরমি সাধক ফকির লালন শাহর শেষ শয্যা রচিত হয়। এর পর থেকেই প্রতিবছর তাঁর তিরোধান দিবস পালিত হয়ে আসছে।