সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার, সর্বনিম্ন আট হাজার ২৫০ টাকা
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মূল বেতন সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার এবং সর্বনিম্ন আট হাজার ২৫০ টাকা নির্ধারণ করার সুপারিশ করেছে সচিব কমিটি। মূল বেতনের সাথে অন্যান্য ভাতাও নিয়ম অনুযায়ী যুক্ত হবে।
আজ বুধবার জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বাধীন কমিটি সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেয়।
আগামী পহেলা জুলাই থেকে দুই ধাপে নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, এটা চূড়ান্ত করতে আরো দুই মাস সময় লাগতে পারে। আর নতুন বেতন কাঠামো বাজার দরে নেতিবাচক কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেও দাবি করেন তিনি।
আগের বেতন কাঠামোর মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় গত বছরের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের এই বেতন ও চাকরি কমিশন (অষ্টম কমিশন) গঠন করা হয়। দায়িত্ব পাওয়ার প্রায় ১৩ মাস পর তাঁরা প্রতিবেদন দেন। সেখানে সরকারি চাকরিজীবীদের শতভাগ বেতন বাড়ানোর সুপারিশ করে কমিশন সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন আট হাজার ২০০ টাকা মূল বেতন নির্ধারণ করার সুপারিশ করে।
এ প্রতিবেদন পর্যালোচনার জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। প্রতিবেদনে সর্বোচ্চ বেতন ৮০ হাজার থেকে কমিয়ে ৭৫ হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন বেতন ৫০ টাকা বাড়িয়ে আট হাজার ২৫০ টাকা করার সুপারিশ করা হয়। কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে এ কমিটি আজ সকালে অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।
দক্ষতা ও সুশাসন বৃদ্ধি পাবে : কমিটি প্রধান
নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়িত হলে সরকারি কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও সুশাসন বৃদ্ধি পাবে বলে মন্তব্য করেন পে-কমিশনের প্রধান মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। তিনি বলেন, পেনশনভোগী সরকারি কর্মচারীদের পেনশনও শতকরা ৮০ ভাগ থেকে বাড়িয়ে ৯০ ভাগ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে স্বেচ্ছা অবসরের সময় ২৫ বছর থেকে কমিয়ে ২০ বছরের সুপারিশ করা হয়েছে। আর নতুন এই বেতন কাঠামোতে প্রতিবছর ইনক্রিমেন্টের ব্যবস্থা রেখে ১৫ বছরের মধ্যে বেতনা দ্বিগুণ করার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর বলেন, ‘এই কাঠামোয় সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ গ্রেডে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। আর মাঝের গ্রেডগুলোতে বেতন বাড়বে বিভিন্ন পর্যায়ে। সেই সঙ্গে বাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য ভাতা ও আর্থিক সুবিধা বাড়ানোরও প্রস্তাব করা হয়েছে।’
বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি কমিশন সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য স্বাস্থ্য ও জীবন বীমা বাধ্যতামূলক করা, পেনশনের হার বাড়ানো এবং কল্যাণ তহবিলের সংস্কার, বাড়ি নির্মাণ ও গাড়ি কেনার জন্য অধিক সুবিধা সৃষ্টি, বেতন কাঠামোর গ্রেড পদ্ধতিতে পরিবর্তন, বিভাজন সৃষ্টিকারী শ্রেণিকরণ পদ্ধতির বিলুপ্তি, ঔপনিবেশিক আমলের ইবি (ইফিসিয়েন্সি বার) তুলে দেওয়া, প্রেষণে নিয়োগ বন্ধ করার মতো সুপারিশ করেছে সরকারের কাছে।
ফরাসউদ্দিন আরো বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে নিয়োগে মেধার প্রধান্য, উপযুক্ত বেতন-ভাতার মাধ্যমে দক্ষতা, সততা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, বস্তুনিষ্ঠ ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে পদোন্নতি, পদায়ন ও প্রশিক্ষণ এবং মৌলিক চাহিদার বিষয়গুলোতে নজর দেওয়া হলে সরকারি কর্মীবাহিনী বাংলাদেশের অগ্রগতিতে আরো বৃহত্তর ও কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে কমিশন মনে করে।’
সর্বশেষ ২০০৯ সালে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো হয়। সে অনুযায়ী বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীরা সর্বনিম্ন ৪,১০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা ‘বেসিক’ ধরে বেতন পাচ্ছেন।
এর সঙ্গে তারা পাচ্ছেন মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে মহার্ঘ্য ভাতা, যা ২০১৩ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হয়েছে। নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের দিন থেকে এই মহার্ঘ্য ভাতা বিলুপ্ত হবে।
নতুন কাঠামো কার্যকর হলে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা পদে যোগ দেওয়া একজন চাকরিজীবীর মূল বেতন হবে মাসে ২৫ হাজার টাকা। আগের কাঠামোতে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের মূল বেতন ছিল ১১ হাজার টাকা।
সর্বোচ্চ স্কেলের মূল বেতন ৮০ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হলেও মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের মূল বেতন ১ লাখ টাকা এবং জ্যেষ্ঠ সচিবদের ক্ষেত্রে ৮৮ হাজার টাকা হবে। সচিবদের অতিরিক্ত দায়িত্বের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ, অর্থাৎ চার হাজার টাকা অতিরিক্ত বেতনের সুপারিশ করা হয়েছে।
সরকারি বেতন কাঠামো অনুযায়ী, এই গ্রেডের কর্মকর্তাদের মূল বেতন নির্ধারিত, অর্থাৎ প্রতিবছর তাদের বেতন আর বাড়ে না বা ‘ইনক্রিমেন্ট’ যোগ হয় না। তবে তারাও নিয়ম অনুযায়ী বাসা ভাড়াসহ অন্যান্য ভাতা পান।
বাজার দরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না : অর্থমন্ত্রী
বিকেলে সচিবালয়ে নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, ‘রিপোর্টটি এখনো আমার পুরোপুরি পড়া হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয় পর্যালোচনা করার পর এ প্রস্তাব কেবিনেটে উঠেবে। তবে বাজেটের ব্যস্ততার কারণে ৪ জুলাইয়ের আগে সেটা আমি দেখতে পারব বলে মনে হয় না। তারপর আরো একমাস লেগে যাবে। তবে নতুন বেতন কাঠামো ১ জুলাই থেকেই কার্যকর হবে।’
অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের আরো বলেন, নতুন কাঠামো কার্যকর করতে সরকারের বেতন বাবদ খরচ বাড়বে ৬৩ দশমিক ৭ শতাংশ। এ জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সরকারের কাছে রয়েছে। আর নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করলে বাজারে কোনো প্রভাব পড়বে না।