কিছুই ছিল না ধসে পড়া সেই ভবনের!
গত ৪ অক্টোবর রাঙামাটি শহরের সরকারি মহিলা কলেজ সড়কে ধসে পড়া দ্বিতল ভবনটি সড়কের মাটি কেটে নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনের জায়গার কোনো কাগজপত্র নেই। এমনকি ভবন নির্মাণের কোনো বৈধ অনুমোদনও ছিল না বলে জানিয়েছে ঘটনার পর গঠিত তদন্ত কমিটি।
আজ বুধবার বিকেলে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নানের অফিস কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করে।
ঘটনার দিন রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসাইনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য ছিলেন গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুকোমল চাকমা ও রাঙামাটি পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান। কমিটি ২৮ দিন পর আজ এই প্রতিবেদন দাখিল করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ধসে পড়া ভবনের প্রকৃত মালিক আবু তৈয়ব। এর তত্ত্বাবধায়ক ছিল তাঁরই শ্যালক মাঈনুদ্দিন টিটু। এই ভবনটি নির্মাণে রাঙামাটি পৌরসভা, বাজারফান্ড প্রশাসন কিংবা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি বলেও প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে কমিটিকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছে কমিটি।
প্রতিবেদনে ভবনটি ধসে পড়ার কারণ হিসেবে বলা হয়, জলমহালের ঢালু জায়গায় ভরাট করা মাটিতে দ্বিতল ভবন নির্মাণ করার ফলে ভরাট করা মাটি পানির কারণে নরম হয় এবং মাটি তার ভার বহন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এ ছাড়া ঢালু হওয়ার কারণে নরম মাটি সরে যাওয়ায় ভবনটি মাটিশূন্য হয়ে পড়ায় ধসে পড়ে এবং পেছনে থাকা জলমহালের পানিতে ডুবে যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাড়ির মালিক আবু তৈয়ব যে স্থানে ভবন নির্মাণ করেছেন, তার কোনো প্রকার কাগজপত্রাদি বা রেকর্ডপত্র নেই। তিনি সরকারি খাস জায়গা এবং পুকুরপাড় দখল করে রাস্তার মাটি কেটে ওই ভবন নির্মাণ করেছেন এবং ওই ভবন নির্মাণের অনুমোদন প্রদানকারী সংস্থা থেকে কোনো ধরনের নকশা অনুমোদন করাননি। অথচ তিনি নিয়মিতই তাঁর শ্যালক মাঈনুদ্দিন টিটুর মাধ্যমে যাবতীয় দেখাশোনা ও মাসিক ভাড়া উত্তোলন করেছিলেন।
প্রতিবেদনে আবু তৈয়ব ও মাঈনুদ্দিন টিটুকে পাঁচটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। এগুলো হলো-ভবন নির্মাণের জায়গার কোনো রেকর্ড না থাকা, মহিলা কলেজে যাতায়াতের সড়কে রাস্তার মাটি কেটে ফেলা, ভবন নির্মাণ অনুমোদনকারী কোনো সংস্থা থেকে নকশা প্রণয়ন বা অনুমোদন গ্রহণ না করা, অবৈধভাবে ভরাট করা মাটিতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণ করে ভাড়া প্রদান এবং জলমহালের জায়গা দখল করা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভবনধস ও পাঁচজনের মৃত্যুর সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব ভবনের মালিক আবু তৈয়বের ওপর বর্তায়। একই সঙ্গে মঈনুদ্দিন টিটু কেয়ারটেকার হিসেবে সঠিকভাবে ভবনের রক্ষণাবেক্ষণ না করায় ভবনধসের ঘটনার জন্য সেও সমানভাবে অপরাধী। তাই ভবন মালিক ও কেয়ারটেকারকে আইনের আওতায় এনে বিচারার্থে সোপর্দ করার সুপারিশ করে কমিটি।
প্রতিবেদনে একই এলাকায় ধসে পড়া ভবনের মতো আরো অনুমোদনহীন ঝুঁকিপূর্ণ ঘরবাড়ি রয়েছে জানিয়ে বলা হয়, যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে সম্পদহানি, এমনকি প্রাণহানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য পৌর মেয়রের নেতৃত্বে গণপূর্ত বিভাগ ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাঙামাটি সদরকে সদস্য করে এরূপ বাড়িঘর চিহ্নিত করে তালিকা প্রণয়ন করা, অবৈধগুলোকে উচ্ছেদ করা এবং বৈধগুলোকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় নির্মাণের ব্যবস্থা করার সুপারিশও করা হয়। একই সঙ্গে এসব বাড়িঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে সিন্ডিকেট করে যারা লাভবান হচ্ছে তাদের আইনের আওতায় আনারও সুপারিশ করে কমিটি।
কমিটি এও জানায় যে, ভবন মালিককে তাঁর যাবতীয় কাগজপত্র উপস্থাপনের জন্য অনুরোধ করা হলেও তিনি ভবনের অনুমতির সপক্ষে কোনো প্রকার কাগজপত্রই দাখিল করেননি।
তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান বলেন, ‘রাঙামাটি শহরে বসবাসের জায়গা কম। ফলে দরিদ্র মানুষকে খুব সহজে উচ্ছেদ করা যায় না। তাই আমরা এসব দরিদ্র মানুষকে সরকারের কোনো একটি প্রকল্পের আওতায় পুনর্বাসন করার বিষয়টি বিবেচনা করব।’