মাহবুবুল হক শাকিলের জানাজা কাল, দাফন ময়মনসিংহে
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলের প্রথম জানাজা আগামীকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। পরে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে ময়মনসিংহে।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহবুবুল হক শাকিলের মরদেহ আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশান ২-এর ৩৫ নম্বর সড়কের ২৭ নম্বরের বাড়ির জাপানি রেস্তোরাঁ সামদাদো থেকে উদ্ধার করা হয়।
বিকেলে সামদাদো রেস্তোরাঁর সামনে সাংবাদিকদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘আজ শাকিলের মরদেহ বারডেমের হিমঘরে রাখা হবে। কাল বুধবার সকালে মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে। সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর প্রথম জানাজা হবে। পরে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে ময়মনসিংহে। সেখানেই তাঁকে দাফন করা হবে।’
এ দিকে ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম ও ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ইকরামুল হক টিটো বলেন, ‘কাল বুধবার বাদ মাগরিব ময়মনসিংহ আঞ্জুমানে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে মাহবুবুল হক শাকিলের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে শহরের ভাটিকাশর পৌর কবরস্থানে দাদির কবরের পাশে শাকিলকে দাফন করা হবে।’
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করীম বার্তা সংস্থা বাসসকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি শাকিল আজ দুপুরে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।’
মাহবুবুল হক শাকিলের বয়স হয়েছিল ৪৭ বছর। তিনি স্ত্রী, এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বিশেষ সহকারী শাকিলের অকালমৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন বলে বাসসের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ দিকে শাকিলের মৃত্যুর সংবাদ শুনে গুলশানের সামদাদো রেস্তোরাঁয় ছুটে যান আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা।
বিকেলে সেখানে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ সাংবাদিকদের জানান, গতকাল সোমবার রাত ৮টায় শাকিল সামদাদোতে আসেন। সেখানেই তিনি রাতে খাওয়া-দাওয়া করে একটি কক্ষে বিশ্রামে ছিলেন। আজ দুপুর ১টা পর্যন্ত তাঁর কোনো খবর না পেয়ে রেস্তোরাঁর লোকজন ডাকতে যায়। কিন্তু তখন কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। পরে লোকজন ঘরে ঢুকে মেঝেতে তাঁর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ পরে শাকিলের পরিবারের লোকজনকে খবর দেয়।
মাহবুবুল হক শাকিল এর আগে প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব (ডিপিএস) হিসেবে সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদায় দায়িত্ব পালন করেছেন। বাসস জানিয়েছে, মাহবুবুল হক শাকিল ১৯৬৮ সালের ২০ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে এসএসসি ও আনন্দমোহন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। শাকিল ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মাহবুবুল হক শাকিলের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায়। তাঁর বাবা জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা। সাবেক এই ছাত্রনেতা সাহিত্য অনুরাগী ও লেখক ছিলেন। তাঁর প্রকাশিত বইগুলো হলো- ‘খেরোখাতার পাতা থেকে’ ও ‘মন খারাপের গাড়ী’।
এ দিকে ময়মনসিংহে এনটিভির স্টাফ রিপোর্টার আইয়ুব আলী জানিয়েছেন, মাহবুবুল হক শাকিলের মৃত্যুর খবরে ময়মনসিংহে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এ দুঃসংবাদ পাওয়ার পর ময়মনসিংহ শহরের বাঘমারা এলাকায় শাকিলের বাসায় ছুটে যান আত্মীয়স্বজন ও রাজনৈতিক সহকর্মীরা।
প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি এবং শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও সেখানে যান পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার জি এম সালেহ উদ্দিন, পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, জেলা প্রশাসক মো. খলিলুর রহমান, পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, পৌরসভার মেয়র ইকরামুল হক টিটু, মহানগর আলীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল প্রমুখ।
শাকিলের জন্য শোক
মাহবুবুল হক শাকিলের অকাল মৃত্যুতে জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রীসহ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা গভীর শোক এবং দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পৃথক শোক বার্তায় তারা প্রয়াত শাকিলকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী একজন দায়িত্বশীল প্রতিভাবান কর্মকর্তা হিসেবে অভিহিত করেন বলে বাসসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
শাকিলের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ও কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, চিফ হুইপ আ. স. ম ফিরোজ, জনপ্রশাসনমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, তথ্যসচিব মরতুজা আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলাম, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আবুল হাসনাত ও সাধারণ সম্পাদক মো. শাহে আলম মুরাদ।