মানবপাচারের বিচারে ট্রাইব্যুনাল
মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত অপরাধী ও মূল হোতাদের বিচারে ট্রাইব্যুনাল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২-এর বিধান অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আইন মন্ত্রণালয় এ উদ্যোগ নিয়েছে।
মানবপাচারের সাথে জড়িতদের মৃত্যুদণ্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদানের কথা বলা হয়েছে আইনে। প্রাথমিকভাবে প্রতি বিভাগীয় শহরে একটি করে ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা ভাবছে আইন মন্ত্রণালয়।
ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘মানবপাচার ও দমন আইনে ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলা হয়েছে। তা ছাড়া কিছুদিন ধরে মানবপাচারের মতো অপরাধ বেড়ে গেছে। এ কারণেই পৃথক ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা আমরা ভাবছি। তবে এই ট্রাইব্যুনাল গঠিত না হওয়া পর্যন্ত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাব্যুনালের বিচারক এ ধরনের মামলার বিচার করতে পারবেন।’
আইন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সমুদ্র পথে অবৈধভাবে বিদেশগামীদের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন এবং মানবপাচার অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের সুরক্ষা ও অধিকার বাস্তবায়ন, নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতকরণের জন্য ‘মানবপাচার ও দমন আইন-২০১২’ করা হয়। মানবপাচার সংক্রান্ত সংঘবদ্ধভাবে সংঘটিত আন্তদেশীয় অপরাধগুলোর প্রতিরোধ ও দমনকল্পে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে এ বিধান করা হয়েছে।
আইনের ২১ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অধীন অপরাধসমূহের দ্রুত বিচারের উদ্দেশ্যে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা দায়রা জজ বা অতিরিক্ত দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারকের সমন্বয়ে যেকোনো জেলায় মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন করিতে পারিবে।’
এই আইনের একই ধারার (২) উপধারায় বলা হয়েছে, ‘ট্রাইব্যুনাল গঠিত না হওয়া পর্যন্ত সরকার প্রত্যেক জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে উক্ত জেলার মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল হিসেবে নিয়োগ বা ক্ষমতায়িত করিতে পারিবে।’
যেসব অপরাধের বিচার হবে : আইনের ৩ ধারায় বলা হয়েছে যে, ‘(ক)কোনো ব্যক্তিকে ভয়ভীতি প্রদর্শন বা বলপ্রয়োগ করিয়া বা (খ) প্রতারণা করিয়া বা উক্ত ব্যক্তির আর্থ-সামাজিক বা পরিবেশগত বা অন্য কোনো অসহায়ত্বকে কাজে লাগাইয়া, বা (গ) অর্থ বা অন্য কোনো সুবিধা লেনদেন-পূর্বক উক্ত ব্যক্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ রহিয়াছে এমন ব্যক্তির সম্মতি গ্রহণ করিয়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বা বাহিরে যৌন শোষণ বা নিপীড়ন বা শ্রম শোষণ বা অন্য কোনো শোষণ বা নিপীড়নের উদ্দেশ্যে বিক্রয় বা ক্রয়, সংগ্রহ বা গ্রহণ, নির্বাসন বা স্থানান্তর, চালান বা আটক করা বা লুকাইয়া রাখা বা আশ্রয় দেওয়া’।
আইনে অপরাধের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বা বাহিরে প্রতারণার মাধ্যমে, অসৎ উদ্দেশে এবং বাধ্যতামূলক শ্রম বা সার্ভিচিউড বা কোনো শোষণ বা নিপীড়নমূলক পরিস্থিতির শিকার হইতে পারে মর্মে জানা থাকা সত্বেও অন্য কোনো ব্যক্তিকে কাজ বা চাকুরীর উদ্দেশ্যে গমন, অভিবাসন বা বহির্গমন করিতে প্রলুব্ধ বা সহায়তা করে, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির উক্ত কর্ম ‘মানবপাচার’-এর অন্তর্ভুক্ত হইবে। আইনের ৬(১) ধারায় বলা হয়েছে যে, ‘কোনো ব্যক্তি উল্লেখিত কোনো কার্য করিলে উহা মানবপাচার অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে।’ এসব অপরাধের জন্য অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও অর্থ দণ্ডের বিধান করা হয়েছে এই আইনে।