ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দরপত্রের টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলের সামনে ওই হল ও মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে এ ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় দায়িত্ব পালনকালে তিন সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করেছে মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগকর্মীরা।
ঝড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেঙে পড়া ৪০টি গাছ বিক্রির নিলাম অনুষ্ঠিত হয় আজ মঙ্গলবার সকালে। এক লাখের কিছু বেশি দর হাঁকিয়ে নিলাম পান আলাল নামের এক ব্যক্তি। আলাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক উপসম্পাদক (বহিষ্কৃত) আবদুর রহিম জুয়েলের আত্মীয় বলে জানা গেছে। জুয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ৪১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, দরপত্র পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পক্ষের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের উপ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক জুয়েল রানা টাকার ভাগ দাবি করেন আবদুর রহিম জুয়েলের কাছে।
এ সময় জুয়েল রানার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক মিনহাজুল আবেদীন, সহসম্পাদক তারেক মো. জুবায়ের ও তানভীর হাসান খান, উপ-বিতর্ক ও নাট্যবিষয়ক সম্পাদক ঠাকুর দেব কুমার আচার্য, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক সজীব কুমার সাহা ও শহীদ রফিক-জব্বার হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইম হাসান। এ সময় টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে তাঁদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে আবদুর রহিম জুয়েলকে মারধর করেন জুয়েল রানা ও তাঁর সাথে থাকা ছাত্রলীগ নেতারা।
মীর মশাররফ হোসেন হলে এ খবর পৌঁছালে ওই হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রামদা, রড, পাইপসহ নানা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলে হামলা চালাতে যান। পরে আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলের ছাত্রলীগ কর্মীরাও দেশীয় অস্ত্র হাতে তাঁদের প্রতিহত করতে উদ্যত হয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলে।
এ সময় খবর সংগ্রহ করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও ইংরেজি দৈনিক দি ইনডিপেনডেন্ট-এর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জনি আলম, অনলাইন সংবাদপত্র বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম ও গ্রিনওয়াচবিডি ডটকমের প্রতিনিধি আলমগীর হোসেন মিজানকে লাঞ্ছিত করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। এ ছাড়া সহকারী প্রক্টর শিকদার মো. জুলকার নাইনকেও লাঞ্ছিত করেন তাঁরা।
ঘটনার ছবি তুলতে গেলে মীর মশাররফ হোসেন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশফিক সরকার সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘পরে সবকিছু নিয়ে পোজ দিব আমরা। তখন ছবি তুলো।’
দরপত্রের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল খায়ের এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘একটা জরুরি মিটিংয়ে আছি। এখন কথা বলতে পারব না।’
পরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুর রহমান জনি ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহমেদ রাসেলসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের হস্তক্ষেপে দুই হলের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ হলে ফিরে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এ বিষয়ে আবদুর রহিম জুয়েল বলেন, ‘আমার এক আত্মীয় ক্যাম্পাসে ঝড়ে ভেঙে পড়া প্রায় ৪০টি গাছের টেন্ডার পান। টেন্ডার পাওয়ার পর জুয়েল রানাসহ অন্য নেতারা আমাদের কাছে ভাগ দাবি করেন। কিন্তু ভাগ না দেওয়ায় তাঁরা আমাকে মারধর করেছেন।’
তবে দরপত্রের ভাগ দাবির অভিযোগ অস্বীকার করে উপ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক জুয়েল রানা বলেন, ‘এটা একটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল। আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা হয়ে গেছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা জানান, উভয় পক্ষের সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে।