প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এনটিভির সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা : প্রধানমন্ত্রী
এনটিভির ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী (৩ জুলাই, সোমবার) উপলক্ষে এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির ২০তম বছর পূর্ণ করে ২১ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষে আমি এনটিভির পরিচালনা পর্ষদ, সাংবাদিক, শুভানুধ্যায়ী ও কলাকুশলীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের মহান স্বাধীনতার পর দেশের গণমাধ্যমকে অবারিতও শক্তিশালী করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতাই প্রথম যিনি স্বাধীন বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চর্চার অবাধ সুযোগ দিয়েছিলেন এবং সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা ও গণমাধ্যমের জাতীয় স্বীকৃতির ব্যবস্থা করেছিলেন। বাংলাদেশের সকল আন্দোলন-সংগ্রামে এবং আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে গণমাধ্যমের অবিস্মরণীয় ভূমিকাকে তিনি আখ্যা দিয়েছিলেন সংগ্রামের প্রতিভূ হিসেবে।’
জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার সবসময়ই গণমাধ্যমের বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। ১৯৯৬ সালে দেশসেবার দায়িত্ব পাওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকার প্রথমবারের মতো দেশে বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চালুর অনুমোদন প্রদান করে। ফলে সম্প্রচার জগতে শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়ের। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আমরা ‘তথ্য অধিকার আইন-২০০৯’ প্রণয়ন করি এবং ‘তথ্য কমিশন’ প্রতিষ্ঠা করি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘গণমাধ্যমের সবচেয়ে বড় বিকাশ ঘটেছে আমাদের সরকারের গত সাড়ে ১৪ বছরে। এ সময়ে আমরা বেসরকারি খাতে ৪৫টি টেলিভিশন, ২৮টি এফএম রেডিও এবং ৩২টি কমিউনিটি রেডিওসহ অসংখ্য সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টালের অনুমোদন দিয়েছি। আমাদের সরকার দেশের গণমাধ্যমকে অবারিত করতে জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা-২০১৭, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪ সহ বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করেছে।’
চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণে দক্ষ, যোগ্য কলাকুশলী এবং নির্মাতা সৃষ্টির জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডিগ্রি ও কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান ও গবেষণামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (সংশোধন) আইন-২০১৯ প্রণয়ন করা হয়েছে। আমরা সাংবাদিকদের কল্যাণে ‘বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট’ স্থাপন করেছি এবং ‘গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলী) আইন-২০২২’ প্রণয়ন করতে যাচ্ছি। সংবাদপত্রে কর্মরত সাংবাদিক, কর্মচারী ও প্রেস শ্রমিকদের কল্যাণে ইতোমধ্যে নবম ওয়েজবোর্ড কার্যকর করা হয়েছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদেরকেও ওয়েজবোর্ডের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বর্তমানে দেশে ১৩ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে যা অনলাইন মিডিয়া, আইপিটিভি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপক প্রসারে ও তথ্য প্রবাহে যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ দেশের সম্প্রচার জগতে বিরাট সুযোগের সৃষ্টি করেছে। আমাদের দেশের সব টেলিভিশন চ্যানেল এখন অনেক সাশ্রয়ী ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করছে।’
আমাদের সরকার কর্তৃক ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ফলে গণমাধ্যম ক্ষেত্রে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি বিকাশ ঘটেছে। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে টেলিভিশনকে শুধু বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ভূমিকা রাখলে চলবে না। সামাজিক দায়বদ্ধতা বজায় রেখে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও অনুষ্ঠান পরিবেশন করে এবং দেশজ শিল্প সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে দেশের মানুষের উন্নত মনন গঠনে এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদসহ নানা অপতৎপরতা দমনে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে অবদান রাখতে হবে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আজ বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে বাংলাদেশের যে উত্তরণ, সেই গৌরব অর্জনে গণমাধ্যম আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সহযাত্রী। আমরা ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ তথা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এই লক্ষ্য অর্জনে এবং গণতন্ত্র ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি আরও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে- এই প্রত্যাশা করি।’
আমি এনটিভির উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।