এক দফা আন্দোলন, পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির
সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই ঘোষণা দেন। পাশাপাশি আগামী ১৮ জুলাই ঢাকার গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ি পর্যন্ত এবং ১৯ জুলাই উত্তরার আবদুল্লাহপুর থেকে বাহাদুরশাহ পার্ক পর্যন্ত পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন দলটির মহাসচিব।
আজ বুধবার (১২ জুলাই) রাজধানীর নয়াপল্টনের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশ থেকে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘তীব্র গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। দফা এক, দাবি এক শেখ হাসিনার পদত্যাগ। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে, আর ওই নির্বাচনেই দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সব বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করেও সমাবেশে লাখো জনতার স্বতস্ফুর্ত উপস্থিতি জনতার সুনামি। অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে শামিল হতে জনতা জেগে উঠেছে। শত বাধা দিয়েও সরকার এ জনতার ঢেউ রুখতে পারেনি। এ আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নেওয়া পর্যন্ত সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও দেশের সব শ্রেণিপেশার নাগরিকদের রাজপথে থাকতে হবে।’
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘দেশের জনগণের ঘাড়ে এক ভয়ানক ফ্যাসিবাদি সরকার চেপে বসে আছে। সংবিধান লঙ্ঘনকারী এ সরকারের পতনে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়া সরকারের বর্বর নির্যাতনের শিকার দেশপ্রেমিকসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিও আমাদের উদাত্ত আহ্বান, আপনারাও নিজ নিজ জায়গা থেকে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। দেশ, দেশের সম্পদ ও মানুষের অধিকার রক্ষায় এগিয়ে আসুন। শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়েই দেশের সম্পদ লুটপাটকারী, স্বৈরতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদি সরকারের বিদায় হবে, ইনশাআল্লাহ।’
সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা আকড়ে ধরে রেখেছে জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘জনগণের দাবি একটাই, সেটা হচ্ছে ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আর কোনো নির্বাচন দেশে হতে দেওয়া যাবে না। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনে জনগণের সরকার কায়েম হবে।’
সারাদেশের মানুষ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ সরকার ক্ষমতায় এসে দেশে হাজার হাজার মানুষকে গুম ও খুন করেছে। ইলিয়াছ আলীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা গুম হয়েছেন। ইলিয়াছ আলীর মা এখনও ছেলের অপেক্ষা রয়েছেন। এখনও ইলিয়াস আলীর মা ছেলের অপেক্ষায় বসে থাকেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ দেশের যা কিছু সুন্দর মূহুর্ত ছিল সবকিছুই ধ্বংস করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতা যুদ্ধের মূলমন্ত্র ছিল দেশে হানাহানি থাকবে না। কিন্তু, আমরা এখন কী দেখছি? আজকে আমাদের ছেলেরা রাতে বাসায় ঘুমাতে পারে না। মিথ্যা মামলা ও ফরমায়েশি রায় দিয়ে তাদের হেনস্তা করা হচ্ছে। শ্রমজীবী মানুষেরা অসহায়। দ্রব্যমূল্যর উর্ধ্বগতির কারণে মানুষ অসহায়। দেশের কৃষক ভাইদের আওয়ামী লীগ আশ্বাস দিয়েছিল, বিনামূল্যে সার দিবে। জনগণকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সরকার প্রতারণা করছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশনেত্রীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে পাঠিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। তারা দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশটাকে চুরি-ডাকাতি করে শেষ করে দিয়েছে। দেশের সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় থাকা এ সরকারের পতন ঘটাতে হবে। সুনামি যখন আসবে তখন দেওয়াল দিয়ে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। ঝড় যখন আসবে তখন বাঁশ দিয়ে আটকানো যাবে না।’
আগামী ১৮ জুলাই রাজধানীসহ সারাদেশে পদযাত্রা কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ঢাকায় দুদিন এ কর্মসূচি পালন করা হবে। ১৮ জুলাই রাজধানীর গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ি পর্যন্ত এবং ১৯ জুলাই আব্দুল্লাহপুর থেকে বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। এ কর্মসূচির পরও যদি সরকার পদত্যাগ না করে তাহলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
দুপুর ২টায় বিএনপির সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা ১২টার আগেই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ভিড় করতে থাকেন দলটির নেতাকর্মীরা। নয়াপল্টনের সড়কটি রাজধানীর ফকিরাপুল থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দৈনিক বাংলার মোড় হয়ে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট হয়ে পল্টন মোড়, পল্টন মোড় থেকে উত্তর দিকে নাইটিংগেল মোড় পর্যন্ত জনস্রোত নামে।