মুন্সীগঞ্জে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর যাবজ্জীবন
মুন্সীগঞ্জে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামী মমিনুল ইসলামকে (৬০) যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোতাহারাত আখতার ভূঁইয়া এই রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আসামি আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
মামলার বাদী ও এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল রাতে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার পশ্চিম পাউসার গ্রামে আসামি মমিনুল ইসলামের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত স্ত্রী শাহনাজ পারভীন শাহিন (৫৫) এর সাথে স্বামী মমিনুল ইসলামের পারিবারিক অহেতুক বিষয় নিয়ে ঘটনার দিন রাত ১০টার দিকে ঝগড়া-বিবাদ হয়। সেই ঝগড়ার জের ধরে একই তারিখ রাত ২টার দিকে স্ত্রী শাহানাজ পারভীন শাহিন ঘুমিয়ে পড়লে তাঁকে শাবল দিয়ে তাঁর মাথায় একাধিক আঘাত করে স্বামী মমিনুল। পরে তাঁকে ঘরে তালাবদ্ধ রেখে স্বামী মমিনুল পালিয়ে যায়। পরের দিন মমিনুল তার মেঝ ভাইয়ের স্ত্রী জিয়াসমিন বেগমকে (৫০) সকাল পৌনে ৮টার দিকে ফোন করে নিহতকে গুরুতর জখম করে ঘরের মধ্যে আটকে রেখেছে বলে জানালে বিষয়টি জিয়াসমিন বেগম নিহতের মেয়ে আলপনা আক্তার মলিকে মোবাইলফোনের মাধ্যমে জানায়। একই দিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে অচেতন অবস্থায় নিহতকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার শাহনাজ পারভীন শাহিনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহতের ভাই সুলতান বেপারী বাদী হয়ে সিরাজদিখান থানায় মামলা দায়ের করলে ২৯ এপ্রিল ২০১৯ তারিখ এই আসামিকে সিরাজদিখান উপজেলার কুচিয়া মোড়া এলাকা হতে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ।
পরে আদালতের কাছে এই আসামি সে তাঁর স্ত্রীকে শাবল দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করেছে বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত এই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন।
এ ব্যাপারে সরকার পক্ষের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট অজয় কুমার চক্রবর্তী বলেন, আসামি তার স্ত্রীকে নৃশংসভাবে গুরুতর জখম করে ঘরে তালা মেরে রেখে পালিয়ে যায়, যাতে তাকে কেউ চিকিৎসা করাতে না পারে। এ মামলায় নিহতের দুই ছেলে মেয়েসহ মোট ১৬ জন আদালতে সাক্ষী দিয়েছে। এছাড়া আসামি নিজেই আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালত এই ঘটনায় সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন।
মামলার বাদী সুলতান বেপারী বলেন, আসামি আমার বোনকে হত্যা করেছে। আদালত আজ হত্যা মামলার রায় দিয়েছেন। আমি রায়ে সন্তুষ্ট হয়েছি। আসামি এর আগেও দুটি বিয়ে করেছে এবং তার আগের দুই স্ত্রীকেও খুন করেছে। তবে ওই ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।
বাদীর মেয়ে আলপনা আক্তার মলি বলেন, আমার বাবা আমার মাকে নৃশংসভাবে খুন করেছে। আমি ও আমার ভাই এ ব্যাপারে আদালতে সাক্ষী দিয়েছি। আমি চাই আমার বাবার সাজা যাতে বহাল থাকে। সে যাতে উচ্চ আদালত থেকে আদেশ নিয়ে বের না হতে পারে। এ মামলায় সে ৫ মাস জামিনে ছিল। জামিনে গিয়ে আমাদের পরিবারকে সে অনেক নির্যাতন করেছে। আমরা তার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেছি।
এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. জামাল উদ্দিন জানান, সিরাজদিখানে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীকে আজ আদালত দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। আসামি আজ পুলিশ হেফাজত থেকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। রায় ঘোষণার পর তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।