মালয়েশিয়ার কথা বলে মিয়ানমারে নিয়ে মুক্তিপণ আদায়, তিনজন আটক
ভাগ্য পরিবর্তন ও উন্নত জীবনযাপনের আশায় মালয়েশিয়া যেতে চেয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ২২ জন যুবক। পরে তাদের কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ট্রলারযোগে মিয়ানমার নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায় করে একটি চক্র। পরে মিয়ানমার থেকে ট্রলারে পাচারকালে ১৯ যুবককে আটক করে মিয়ানমার কোস্টগার্ড। পরে বাংলাদেশে এই চক্রের হোতাসহ তিনজনকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গতকাল শুক্রবার (১৮ আগস্ট) দিনগত রাতে নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
মঈন জানান, ২২ যুবকের বাকি তিন যুবক অবৈধভাবে মালয়েশিয়া পৌঁছে গেছেন। কিন্তু, পাচারকারী চক্রের নির্মম নির্যাতনে মালয়েশিয়া পৌঁছানোর পর জহিরুল ইসলাম নামে একজন মারা যান। বাকি দুজন অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় আছেন।
আটক ব্যক্তিরা হলেন—মূলহোতা মো. ইসমাইল ও তার দুই সহযোগী তার সহযোগী জসিম (৩৫) এবং মো. এলাহীকে (৫০) আটক করে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ১৯ মার্চ টেকনাফ থেকে নৌপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় মিয়ানমারের কোস্টগার্ড ওই যুবকদের আটক করে। পরে ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা গত ১০ জুলাই নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে গিয়ে তাদের স্বজনদের ফিরে পেতে সরকারি উদ্যোগ নেওয়ার আবেদন জানান। এ ঘটনায় গত ১৫ এপ্রিল আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানায় একটি মানব পাচার আইনে মামলা (নম্বর- ২১/১৪৯) করেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘এ চক্রের মাধ্যমে মালয়েশিয়া পাচার হওয়া জহিরুল গত ২৪ মে মালয়েশিয়ার একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। গত ২৮ মে বাংলাদেশ সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় তার মরদেহ দেশে আনা হয়। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে চক্রের মূলহোতাসহ তিনজনকে আটক করা হয়।’
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ইসমাইল গত ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত মালয়েশিয়া অবস্থানকালীন মিয়ানমারের আরাকানের নাগরিক (রোহিঙ্গা) রশিদুল ও জামালের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং সখ্যতা গড়ে ওঠে। পরে ইসমাইল দেশে ফিরে এসে রশিদুল ও জামালের যোগসাজশে ১০ থেকে ১২ জনের একটি আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্র গড়ে তোলে। স্থানীয় এজেন্টদের যোগসাজশে বাংলাদেশে মানব পাচার চক্রটির শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন এলাকার তরুণ ও যুবকদের কোনো প্রকার অর্থ ও পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পৌঁছানোর আশ্বাস দেন। মালয়েশিয়া পৌঁছানোর পরে কাজ করে তিন লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে এমন প্রলোভন দেখিয়ে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার এলাকার ২২ জনকে পাচার করে। এরপর মিয়ানমারে তাদের আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করতে অমানবিক নির্যাতন চালায়।’
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে আদায় করা তিন লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে আটক ইসমাইল, জসিম ও আলম ৩০ হাজার টাকা করে নেন। চক্রের অন্য সদস্যরা ১০ হাজার টাকা করে পেতেন এবং বাকি দুই লাখ ২০ হাজার টাকা মালয়েশিয়া অবস্থানরত রশিদুলের কাছে মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাতেন চক্রের ইসমাইল।’