মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে টেকনাফে বিশেষ জোন স্থাপন হয়েছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ইয়াবা ও আইস প্রতিরোধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অধীন টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার সমন্বয়ে ‘টেকনাফ বিশেষ জোন’ স্থাপন করা হয়েছে। গতকাল (৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে তিনি এ তথ্য জানান।
সংসদ সদস্য এম. আব্দুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো চলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর এ ঘোষণা বাস্তবায়নে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিরলসভাবে কাজ করছে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ২০২২ সালে সারা দেশে অভিযান চালিয়ে এক লাখ ৯৩ হাজার ৩৩১ কেজি আইস ও ১৬৭টি এলএসডি জব্দ করেছে। এই সময়ে ২০২২ সালে এক লাখ ৩২১টি মামলা দায়ের এবং এক লাখ ২৪ হাজার ৭৭৫ জন অবৈধ মাদক কারবারীকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। ওই সময়ে চার কোটি ৫৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫৬৯ পিস ইয়াবা, এক লাখ ১৫ হাজার ৩৬৮ কেজি গাঁজা, সাত লাখ ছয় হাজার ৬১ বোতল ফেনসিডিল, ৩৩৮ কেজি হেরোইনসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে।
একই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, মিয়ানমারের নাফ নদী হয়ে আমাদের দেশে এমফিটামিন (ইয়ারা) ও ক্রিস্টাল মেথ (আইস) অনুপ্রবেশ করে। ইয়াবা ও আইস প্রতিরোধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অধীন টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার সমন্বয়ে ‘টেকনাফ বিশেষ জোন’ স্থাপন করা হয়েছে। সীমান্তে আইসসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্যের চোরাচালান প্রতিরোধে কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এনফোর্সমেন্ট কমিটির সভা ও পরিবীক্ষণ সভাতেও এ সংক্রান্তে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ক্রিস্টাল মেথ (আইস) প্রতিরোধে বিজিবি ও কোস্টগার্ড ও সব সংস্থার সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৪০ ধারায় মাদকদ্রব্য অপরাধের নেপথ্যে জড়িত অর্থ যোগানদাতা, পৃষ্ঠপোষক, মদদদাতাদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
মন্ত্রী আরও জানান, ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিডিএমএস) সফটওয়্যারের মাধ্যমে মানবপাচারকারীদের তথ্য ভান্ডার সংরক্ষণ করা হচ্ছে। মানবপাচারের মতো গুরুতর ও সংঘবদ্ধ অপরাধ প্রতিরোধ ও দমনে বর্তমান সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। দেশের অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরে মানবপাচার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অপরাধ কার্যকরভাবে প্রতিরোধের জন্য দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
এম আব্দুল লতিফের প্রশ্নোর জবাবে মন্ত্রী আরও জানান, মানবপাচার সংশ্লিষ্ট অপরাধ বিশেষত নারী ও শিশুদের প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশর একটি সমঝোতা স্মারক রয়েছে। মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ এ কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, সীমান্ত এলাকায় ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে কঠোর নজরদারি, ভিকটিমদের দ্রুত উদ্ধার, সুরক্ষা ও পুনর্বাসন সহায়তা প্রদানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করার ফলে দেশে বর্তমানে মানবপাচার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অপরাধ কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে।
কারাগারগুলোতে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দি
সরকারি দলের সংসদ সদস্য এম আব্দুল লতিফের প্রশ্নোর জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দেশের কারাগারগুলোতে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ বেশি বন্দী রয়েছে। কারাগারের ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার ৮৬৬ জন হলেও বর্তমানে বন্দীর সংখ্যা ৭৭ হাগার ২০৩ জন। যশোর, সিলেট, দিনাজপুর, ফেনী, পিরোজপুর ও মাদারীপুর কারাগার ব্যতীত বর্তমানে দেশের সব কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত বন্দি আটক রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সর্বোচ্চ নয় হাজার ৭৬৫ জন বন্দী রয়েছে। এই কারাগারের ধারণ ক্ষমতা চার হাজার ৫৯০ জন। ঝালকাঠি জেলা কারাগারে সর্বনিম্ন ১৮৯জন বন্দি রয়েছে।
একই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, কারাগারের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি একটি চলমান প্রক্রিয়া। বর্তমানে ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, খুলনা নরসিংদী ও জামালপুর—এই পাঁচটি কারাগার নির্মাণ ও সম্প্রসারণের কাজ চলছে। কারাগারগুলোর নির্মাণকাজ সমাপ্ত হলে বন্দি ধারণক্ষমতা প্রায় পাঁচ হাজার জন বৃদ্ধি পাবে।