তলে তলের ঘটনা রাজনৈতিক সংকট মীমাংসা করবে না : শামসুজ্জামান দুদু
‘তলে তলে মিমাংসা হয়ে গেছে’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ‘তলে তলের কোনো ঘটনা দেশের রাজনৈতিক সংকট মীমাংসা করবে না।’
আজ বুধবার (৪ অক্টোবর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দলের (পিএনপি) ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘গণতন্ত্র রক্ষায় সুশাসনের লক্ষ্যে নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প নেই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন দুদু।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘তলে তলে, আড়ালে-আবডালে যেসব জিনিস হয়, সেটি ষড়যন্ত্র। কিছুদিন আগে নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এমন কিছু আমরা ভারতকে দিয়েছি, ভারত কখনোই তা ভুলতে পারবে না। কী দিয়েছেন? তিনি বলেননি। যেহেতু বলেননি, তাহলে সেটি তলে-তলের ব্যাপার। সেজন্য আমি বলি, তলে তলের কোনো ঘটনা বাংলাদেশের মুক্তির কারণ হবে না। তলে-তলের ঘটনা সংকট কাটাবে না। তলে-তলের ঘটনা রাজনৈতিক সংকট মীমাংসা করবে না।’
শামসুজ্জামান দুদু আরও বলেন, ‘তলে তলে না খেলে, প্রকাশ্যে যিনি বাংলাদেশের অহংকার, যিনি তিন বারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, যিনি নির্বাচনে কখনো পরাজিত হননি, তাকে সামান্য চিকিৎসা সুবিধা দিন। তার পছন্দের জায়গায় চিকিৎসা নেওয়ার সুবিধা দিন। হাজী সেলিম, মায়া সাহেবের থেকে নিশ্চয়ই তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বড়, অনেক উঁচুদরের মানুষ। এরা (হাজী সেলিম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া) যদি বিদেশে চিকিৎসা পেতে পারেন, জামিন পেতে পারেন, তাহলে বেগম জিয়া কেন পাবেন না?’
দেশে কি দুই আইন চলছে, প্রশ্ন তুলে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘একটি আইন বিরোধী দলের জন্য, আরেকটি সরকারি দলের জন্য। এমন দেশ পৃথিবীর আর কোথাও আছে, আমার জানা নেই।’
‘দেশে ঘোরতর অন্ধকার সময় চলছে’ মন্তব্য করে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘এত খারাপ সময়ে বাংলাদেশ আগে কখনো নিপতিত হয়নি। বাংলাদেশে এখন কথা বলা যায় না। সত্য কথা যদি আপনি বলেন, তাহলে বিপদে পড়ার সম্ভানাই বেশি। তিনি সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, লেখক যেই হোক। এমনকি, তিনি যদি দেশের বাইরেও থাকেন, তাহলেও বিপদে পড়তে পারেন, অর্থাৎ মামলা খেতে পারেন। তার স্বজনরা যারা দেশে আছেন, তারা গ্রেপ্তারও হতে পারেন। তাদের মালামাল ক্রোক হতে পারে।’
শামসুজ্জামান দুদু আরও বলেন, ‘এ এক বিচিত্র দেশ। যে দেশ গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করেছে, এক সাগর রক্ত দিয়েছে, মা-বোনরা আব্রু হারিয়েছে এবং লাখ লাখ সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, অধিকারের জন্য, কিন্তু ৫২ বছর পরে এসে সে দেশে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও অধিকার নেই। চাইলেই পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন না। কেন্দ্রে গেলেই শুনবেন, আপনার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে।’
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘যে নেত্রী ১৬ টাকার চাল ১০ টাকায় খাওয়াবেন বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় এসে ৬০ থেকে ৮০ টাকা দামে চাল খাওয়াচ্ছেন। এটা কেমন দেশ, যারা অবলীলায় নিজেদের ওয়াদা ভুলে যান, খর্ব করে। এ কেমন দেশ, যেখানে কোনো নিরাপত্তা নেই। আপনি ঘরে থাকেন বা বাইরে, আপনি ভালো থাকবেন, নিরাপদে থাকবেন, এ নিশ্চয়তা নেই।’
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘উদ্যোগ যত ছোট বা ক্ষুদ্র হোক না কেন, লক্ষ্য যদি ভালো হয়, তাহলে সাফল্য অবধারিত। আসুন বিএনপিসহ যেসব বিরোধী দল এখন রাস্তায় দেশের মর্যাদা, রাজনীতির সমস্যা নিরসন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছে, আন্দোলন করছে, সেই উদ্যোগে আমরা সবাই শরিক হই।’
পিএনপির চেয়ারম্যান ফিরোজ মোহাম্মদ লিটনের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব আলহাজ আহম্মেদুর রহমান খোকনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম, কৃষকদলের নেতা রবিউলসহ আরও অনেকে।