আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে নওগাঁয় বিএনপির মানববন্ধন
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে নওগাঁয় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে জেলা বিএনপি। ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার নেতাকর্মী ও সাধারণ নাগরিদের পরিবারের স্বজনদের মানববন্ধন’ শিরোনামে শহরের কেডির মোড়ে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচি বেলা ১১টায় শুরু হয়ে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কর্মসূচি চলে। কর্মসূচিতে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের দেড় শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম।
মানববন্ধনে জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান, জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপিনেতা অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক, মহিলা দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সামিনা পারভীন পলি, সাধারণ সম্পাদক শবনম মুস্তারী কলিসহ গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের স্বজনরা বক্তব্য দেন। এ সময় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা লে. কর্নেল (অব.) আব্দুল লতিফ খান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইকরামুল বারী টিপু ও সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিএনপির মহাসমাবেশের আগে ও পরে নওগাঁয় বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর অন্তত ২০টি মামলা হয়েছে। সব মামলাই ভিত্তিহীন। এসব মামলায় গত দেড় মাসে জেলায় ২৫০ থেকে ৩০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না। মিথ্যা মামলায় হয়রানি এবং জামিন না দেওয়া চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন।’
জেলা মহিলা দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সামিনা পারভীন বলেন, ‘আমার বাবা, চাচা ও চাচাতো ভাইসহ আমার পরিবারে সাতজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার বাবা-চাচারা যে বাংলাদেশের স্বপ্নে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশটাকে স্বাধীন করেছিলেন, আজকে তাঁদের সেই স্বপ্ন ভেঙে গেছে। আজকে দেশের মানুষের মানবাধিকার নেই। ভোটের অধিকার নেই। দেশের মানুষের মানবাধিকার ও ভোটের অধিকার রক্ষার যে লড়াই শুরু হয়েছে, এটা আরেকটা যুদ্ধ। এই যুদ্ধে আমাদের জিততেই হবে।’
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলায় আজকে সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের গণহারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তারের ভয়ে বাড়িতে থাকতে পারছে না। সমগ্র দেশটা আজকে একটা কারাগারে পরিণত হয়েছে। বিএনপি শুধু তাদের নেতাকর্মীদের অধিকার রক্ষার জন্য লড়ছে না। সারা দেশের মানুষের মানবাধিকার ও ভোটের অধিকার রক্ষার লাড়াই করছে। এই লড়াইয়ে অবশ্যই জিততে হবে।’
নওগাঁ জেলা মহিলা দলের সদস্য মরিয়ম বেগম শেফা বলেন, ‘আমি বিএনপির রাজনীতি করি, দলের পদে আছি। কিন্তু আমার স্বামী কোনো দল করে না। একজন সাধারণ ব্যবসায়ী। তারপরও তাঁকে নাশকতার মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমিও পলাতক। আজকে আমার ব্যবসায় তালা। বাসায় তালা। ছেলে ঢাকাতে পড়াশোনা করছে। তাঁর লেখাপড়ার খরচ জোগাতে পারছি না। আমার মতো আজকে দেশের হাজার হাজার মা-বোনের এই সমস্যা। স্বামী-সন্তানদের কাছে না পেয়ে মুখে ভাত উঠে না।’
দেড় মাস পর বিএরপির এই মানববন্ধন কর্মসূচিকে ঘিরে নেতাকর্মীদের পদচারণে মুখর হয়ে জেলা বিএনপির কার্যালয়। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠিত সমাবেশের কয়েক দিন আগে থেকে পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের ধরপাকড় শুরু করলে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে কাউকে আসতে দেখা যায়নি। প্রায় দেড় মাসের বেশি সময় বিএনপির কার্যালয়টিতে তালা ঝুলে ছিল।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও মান্দা উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. ইকরামুল বারী টিপু বলেন, ‘গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠিত সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের দমনপীড়ন শুরু করলে দলের নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য হন। আজকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আমরা সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে দলীয় কার্যালয়ে এসেছি। কার্যালয়ের তালা খুলেছি। এখন থেকে যতই দমন-পীড়ন চলুক না কেন? আমরা পার্টি অফিসে বসব।’