১১০ টাকা কেজি পেঁয়াজ, কেনা যাবে ২ কেজি
ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার পর পরই হঠাৎ করে সারা দেশে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। সুনামগঞ্জেও ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়তে থাকে এর দাম। এমন পরিস্থিতিতে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জরুরি সভা করেছে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন।
আজ সোমবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় পেঁয়াজের দাম নিয়ে কিছু ব্যবসায়ীর কারসাজি উঠে এলে বক্তারা তাঁদের কঠিন সমালোচনা করেন। সভায় ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজির সঙ্গে যৌক্তিক লাভ পাঁচ থেকে ১০ টাকা যুক্ত করে পেঁয়াজ বিক্রির সিদ্ধান্ত জানান জেলা প্রশাসক।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিজন কুমার সিংহের সঞ্চালনায় সভায় জেলার বিভিন্ন উপজেলার ব্যবসায়ী, চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি, পুলিশের কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা বক্তব্য দেন।
বক্তব্যে বক্তারা পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের কঠোর সমালোচনা করে জানান, আমদানি বন্ধের ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পেঁয়াজের সিন্ডিকেট করে ঘণ্টায় ঘণ্টায় দাম বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে কেজিতে ৮০ থেকে ৯০ টাকা বেড়ে গেছে। পুরাতন স্টককে নতুন দেখিয়ে প্রতি কেজি ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বাসায়, গুদামে পেঁয়াজ স্টক করে বলছে পেঁয়াজ নেই। জনগণের উপর জুলুম না করে নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে ব্যবসা করতে হবে। না হলে এসব রোধে শুধু অর্থদণ্ড যথেষ্ট নয়। অর্থদণ্ডের পাশাপাশি কারাদণ্ডসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ী ও ভোক্তা উভয়ের কথা শুনেছি। কিছু কিছু ব্যবসায়ীর কারসাজি প্রমাণিত হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। যারা এমন কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে আজকের সভা থেকে কঠোর বার্তা দিতে চাই। আজ থেকে আগামী কয়েকদিন বাজার কঠিনভাবে মনিটরিং করা হবে এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানো হবে। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে যেখানে অতিরিক্ত মজুদের খবর পাওয়া যাবে সেখানেই অভিযান চালানো হবে। এ ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি পরিপত্র দেওয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে খুচরা পর্যায়ে ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজিতে পেয়াজ বিক্রি করতে হবে। আপাতত সামনের কয়েকদিন খুচরা ব্যবসায়ীরা এক থেকে দুই কেজির বেশি পেঁয়াজ বিক্রি করবেন না এবং পাইকারি ব্যবসায়ীরা এক থেকে দুই বস্তার বেশি পেঁয়াজ খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করবেন না। তাহলে হয়তো এই সংকটটা কেটে যাবে।
এসময় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঢাকা থেকেই ১০০-১১০ টাকা মূল্যে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে, তাহলে স্থানীয় ভাবে এই টাকায় কীভাবে বিক্রি হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক জানান, পরিপত্রে বলা আছে এই দামের সঙ্গে যৌক্তিক লভ্যাংশ যোগ করা যেতে পারে। তবে সেটা অবশ্যই পাঁচ থেকে ১০ টাকার বেশি নয়। সেক্ষেত্রে পাকা ভাউচার সংরক্ষণ করতে হবে। এসব দেখে পরিস্থিতি বিবেচনা করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা আদালত পরিচালনা করবেন।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ বিন রশিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আল আমিনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরপ্রধানরা।