নওগাঁয় চাষাবাদে নতুন সংযোজন রঙিন ফুলকপি
নওগাঁয় রঙিন ফুলকপি চাষ করে সফল হয়েছেন কৃষক জালাল হোসেন। নওগাঁ সদর উপজেলার হাপানিয়া ইউনিয়নের কসবা গ্রামে বাড়ির পাশে ১২ শতক জমিতে রঙিন ফুলকপি চাষ করছেন এই কৃষক। বাহারি রঙের ফুলকপি চাষ করে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছেন তিনি। প্রতিদিনই হলুদ, বেগুনি রঙের ফুলকপি দেখতে ও কিনতে ভিড় করছে মানুষ। আকারে বড় এসব ফুলকপির দামও বেশি। এতে লাভবান হয়েছেন কৃষক জালাল।
জালাল হোসেন বলেন, ‘গত বছর নওগাঁর স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা মৌসুমী থেকে কৃষি বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। প্রশিক্ষণে ভিডিও ফুটেজে রঙিন ফুলকপি চাষ দেখে সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সংস্থাটির সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো এক হাজার চারা এনে জমিতে রোপণ করি।’
কৃষক জালাল বলেন, ‘আমি যখন জমিতে ফুলকপি চাষ করি; তখন অনেকেই বলেছিলেন এই ফুলকপি এই এলাকায় ভালো হবে না। খেতে যদি খারাপ লাগে তখন কে নেবে? তাদের কথায় ভেঙে পড়িনি। আমার মনে জোর ছিল, বাজারে বিক্রি করতে পারব। সেই আশায় চাষ করে বেশ সাড়া পেয়েছি এবং আর্থিকভাবেও সফল হয়েছি। ১২ শতক জমিতে দুই রকমের ফুলকপি চাষ করেছি। খরচ হয়েছে প্রায় আট হাজার টাকা। প্রতি পিস কপি ৪০ থেকে ৫০টাকা দামে বিক্রি করছি। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার টাকার ফুলকপি বিক্রি করেছি।’
জালাল হোসেন বলেন, ‘জমিতে যে পরিমাণ ফুলকপি আছে, তা বর্তমান বাজারদরে আরও ২৫ হাজার টাকা বিক্রি করা যাবে। আট হাজার টাকা খরচ করে ৪৫ হাজার টাকার রঙিন ফুলকপি বিক্রি করতে পারব। আমার জমিতে রঙিন ফুলকপি চাষ দেখে এলাকার কৃষকরা বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আগামী বছর অনেকেই বাহারি রঙের ফুলকপি চাষ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বাহারি রঙের ফুলকপি চীনে খাওয়া হয় সালাদ হিসেবে। সাদা ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপির পুষ্টিগুণ বেশি। বাজারেও চাহিদা বেশি। দেখতে সুন্দর এ কপি আধাসিদ্ধ করেই খাওয়া যায়। কম খরচ ও কম পরিশ্রমে চাষ করে লাভবান হওয়া সম্ভব। জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের বদলে ব্যবহার করা হয়েছে জৈব সার ও ফেরোমন ফাঁদ। চারা রোপণের ৭০ থেকে ৮০ দিনের মধ্যেই কপি বিক্রি করা যায়। একেকটি ফুলকপির ওজন হয় প্রায় দুই কেজি।
কসবা গ্রামে রঙিন ফুলকপি দেখতে ও কিনতে আসেন একই গ্রামের মোখলেছুর, আসাদুজ্জামান, সেলিনা ও মোরশেদা। তারা বলেন, ‘প্রথমবার এমন বাহারি রঙের ফুলকপি দেখলাম। জালাল ভাইয়ের কাছ থেকে হলুদ ও বেগুনি রঙয়ের ফুলকপি কিনলাম। বাহারি রঙের ফুলকপি দেখতেও বেশ ভালো লাগছে।’
মৌসুমীর কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান আরিফ বলেন, ‘উচ্চ ফলনশীল ও উচ্চমূল্যের নতুন ফসলজাত প্রচলন প্রদর্শনীর আওতায় হলুদ রঙের ভ্যালেন্টিনা এবং বেগুনি রঙের ক্যারেটিনা জাতের এ ফুলকপি পরীক্ষামূলক প্রদর্শনী হয়েছে। সফলতা আসায় আগামীতে এ অঞ্চলে সবজিটি ব্যাপকভাবে চাষাবাদ করানো হবে। কৃষক জালাল হোসেনের মাধ্যমে এ বাহারি ফুলকপির আবাদ করানো হয়। নওগাঁয় এটাই প্রথম রঙিন ফুলকপি চাষ।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপরিচালক কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার জানামতে, নওগাঁয় প্রথমবার জালাল হোসেন বাহারি রঙের ফুলকপি চাষ করে সফল হয়েছেন। এলাকার অন্য কৃষকদের মাঝে বেশ আগ্রহ তৈরি হয়েছে। রঙিন ফুলকপিতে ভিটামিন এ, সি, কে, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, এন্টিঅক্সিডেন্টসহ মানবদেহে উপকারী বিভিন্ন উপাদান আছে। সাধারণ ফুলকপি যেখানে ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়, সেখানে এটি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। আশা করা যাচ্ছে, আগামীতে রঙিন ফুলকপি চাষ অনেকটাই বাড়বে।’