আ.লীগ নেতাদের ‘সভ্যতার জন্য বৈরী’ ঘোষণার আহ্বান এবি পার্টির
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে ‘লুটেরা’ এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে ‘মানবতাবিরোধী সন্ত্রাসী দল’ হিসেবে উল্লেখ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব স্তরে এই দলের নেতাদের ‘সভ্যতার জন্য বৈরী’ ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছে ‘এবি পার্টি’।
আজ শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বিজয়নগরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্ষণ-নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে এ আহ্বান জানান এবি পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা।
সমাবেশে এবি পার্টির নেতারা বলেন, ‘একটি অবৈধ, একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেই পূর্বের ন্যায় সিন্ডিকেট বাণিজ্যকে চাঙা করে তুলেছে আওয়ামী লীগ। যার ফলে ক্রমাগত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির যাতাকলে পিষ্ট হচ্ছে জনগণ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ গড়ে তুলেছে ধর্ষণ, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের অভয়ারণ্য।’
বক্তারা বলেন, ‘সরকারের এই সিন্ডিকেট বাণিজ্য ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এই অরাজকতা আর চলতে দেওয়া যায় না।’ অবিলম্বে জনগণের রক্তচোষা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নৈরাজ্যের প্রতিবাদে জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান তারা।
এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন ‘বিজয় ৭১’ চত্বরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। এতে বক্তব্য দেন দলের যুগ্ম আহ্বায়ক বি এম নাজমুল হক, সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
সভাপতির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, ‘স্বাধীনতার সব অঙ্গীকার আওয়ামী লীগ ভঙ্গ করেছে। সারা বাংলার কৃষক যা উৎপাদন করে তার মূল্য সে পায় না। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের গুন্ডারা রাস্তার মোড়ে মোড়ে চাঁদাবাজি করে এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আর থাকছে না। আমদানিকৃত সব পন্য আওয়ামী সিন্ডিকেটের দখলে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হল দখল শুধু নয়, সেখানে আজ আমাদের ছাত্রী-বোনেরাও সম্ভ্রম নিয়ে টিকে থাকতে পারছে না। ছাত্রলীগের গুন্ডারা স্বামীকে বেধে রেখে স্ত্রীকে নির্যাতন করছে, চোরের মতো ঘরে ঢুকে নারী নির্যাতন চালাচ্ছে। এসব অপকর্ম চলতে দেওয়া হবে না। এই অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে এ বি পার্টি গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি করবে, ইনশাআল্লাহ।’ জনগণকে এবি পার্টির আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বি এম নাজমুল হক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই জনগণের মধ্যে হাহাকার তৈরি হয়। মানুষের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পরে। সব সময়ই তারা লুটপাট করে মানুষের সব অধিকার হরণ করে। সারা বিশ্বে রমজানে জিনিস পত্রের দাম কমে, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ রমজানের আগেই সিন্ডিকেট করে সব জিনিসের দাম বাড়িয়ে মানুষের জীবনকে অসহনীয় করে তুলেছে।’
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘সব ক্যম্পাস থেকে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠনগুলোকে অস্ত্রের জোরে বের করে দিয়ে দখলে নিয়েছে ছাত্রলীগ। এখন তারা নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। এর মূলে আছে যাচ্ছেতাই মাদকের ব্যবসা, চাঁদাবাজি এবং ছাত্রী ও নারীদের সম্ভ্রম লুণ্ঠনের মানবতাবিরোধী অপকর্মের প্রতিযোগিতা।’
মঞ্জু বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতারা একদিকে জনগণের সম্পদ লুণ্ঠনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, আর ছাত্রলীগ নেতারা আছেন নারীদের ইজ্জত লুণ্ঠনের সেঞ্চুরি উদযাপনে ব্যস্ত।’ তিনি আওয়ামী লীগকে ‘লুটেরা’ এবং ছাত্রলীগকে ‘মানবতাবিরোধী সন্ত্রাসী দল’ হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব স্তরে এই দলের নেতাদের ‘সভ্যতার জন্য বৈরী’ ঘোষণা করার আহ্বান জানান।
ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, ‘সরকার নিজ দেশের স্বার্থ ও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনকে কোনোরকম অগ্রাধিকার না দিয়েই ৩৫০ বার্মিজ সীমান্তরক্ষীকে ফেরত দিয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে চলা গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো দায় এসব পুলিশ, সেনা সদস্যদের ছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হয়নি; যা একটা অবৈধ সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতিরই বহিঃপ্রকাশ। বার্মার জেলে অনেক বাংলাদেশি জেলে আটক আছে, তাদেরকে ফিরিয়ে আনার জন্য সমঝোতা হতে পারত। আবার বাংলাদেশের কারাগারে শতাধিক মিয়ানমারের নাগরিক বন্দি আছে, যাদেরকে মিয়ানমারের সামরিক সরকার ফেরত নিচ্ছে না। সে ব্যাপারেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হলো না। দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে না পারলেও কিন্তু ড. ইউনূসকে হেনস্তা করার ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি নেই। গত কয়েকদিন গ্রামীণ ভবনের আটটি প্রতিষ্ঠান সরকার দলীয় গুন্ডা-পান্ডা দিয়ে দখল করানো হয়েছে। এখন সেসব প্রতিষ্ঠানের সঞ্চিত অর্থ লুট করার আয়োজন চলছে। আওয়ামী দখলদারদের হাতে দেশ পরাধীন হয়ে যাবার পরে কোনো প্রতিষ্ঠান আর স্বাধীনভাবে পরিচালনা করা যাবে না।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন এবি পার্টির কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, যুব পার্টির আহ্বায়ক এ বি এম খালিদ হাসান, সহকারী সদস্য সচিব শাহ আব্দুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার ফারুক, গাজী নাসির, যুগ্ম সদস্যসচিব সফিউল বাসার, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হালিম নান্নু, আমিরুল ইসলাম নুর, যুব পার্টি মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক তোফাজ্জল হোসেন রমিজ, উত্তরের সদস্য সচিব শাহিনুর আক্তার শীলা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সেলিম খান, আমেনা বেগম, ফেরদৌসী আক্তার অপি, মশিউর রহমান মিলু, রিপন মাহমুদ, ছাত্রনেতা হাসিবুর রহমান খান, পল্টন থানা আহ্বায়ক আব্দুল কাদের মুন্সিসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।