ছেলে হত্যা মামলায় মা-বাবার যাবজ্জীবন
মুন্সীগঞ্জে ছেলেকে হত্যার দায়ে মা ও বাবাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ রোববার (১০ মার্চ) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোতাহারাত আখতার ভুইয়া এ রায় ঘোষণা করেন।
এ ছাড়া অপর দণ্ডবিধি ২০১ ধারার মালায় পাঁচ বছরের সশ্রম করাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও পাঁচ মাসের বিনাশ্রম করাদাণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে এই মা ও বাবাকে।
আসামিরা হলেন গজারিয়া উপজেলার হোসেন্দি এলাকার মো. লোকমান শিকদারের ছেলে শামিম শিকদার (৪০) ও তার স্ত্রী হাসিনা বেগম (৩৮)।
আসামি শামিম শিকদার গ্রেপ্তারের পর থেকে পুলিশ হেফাজতে ছিলেন। আজ তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণার পর তাঁকে পুনরায় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ সময় অপর আসামী হাসিনা বেগম জামিনে মুক্ত থেকে আদালতে হাজির হন। রায়ের পর তাঁকেও কারাগারে পাঠান আদালত।
বিষয়টি নিশ্চত করেছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোজাফ্ফর আলী।
ভাইকে হত্যার অভিযোগে আসামিদের অপর ছেলে মো. হোসেন বাদী হয়ে গজারিয়া থানায় এ মামলা করেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি সকাল ৯টায় উপজেলার হোসেন্দী ইউনিয়নের বাজার হোসেন্দী (শেখেরবাড়ী) বাদীর বাড়ির পেছনে ডোবায় বাদীর ভাই মো. হাসান (২০)-এর অর্ধগলিত মরদেহ ভেসে ওঠে। এ সময় বাদীসহ অন্যরা থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে।
এর আগে ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর রাত অনুমান ১০টায় রাতের খাবার খেয়ে বাদীসহ মা-বাবা, ছোট বোন ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন এবং তাঁর ভাই হাসান একা পাশের ঘরে ঘুমান। ওই রাত ৩টায় বাদীর ছোট বোন শিলা প্রকৃতির ডাকে ঘরের বাইরে গেলে বাদীর ভাই হাসান তাকে ডাক দিয়ে ঘরে নেন। এরপর বোনকে চেপে ধরলে সে চিৎকার দেয়। তার চিৎকার শুনে মা-বাবা ওই ঘরে যান। এ সময় বাদীও তাঁদের পেছনে পেছনে যান এবং ঘটনা দেখেন। মা-বাবা ও বোন মিলে তার (বাদীর) ভাইকে খাটের উপর বালিশ দিয়ে মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। এ সময় তাঁর মা পা চেপে ধরেন আর বোন চাকু দিয়ে তাঁর পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলেন। পরে মরদেহ গোপন করার উদ্দেশ্যে বাড়ির পেছনে ডোবায় কচুরিপানার নিচে লুকিয়ে রাখেন।
এরপর ৯ জানুয়ারি ভাই হত্যার অভিযোগে মামলা করলে পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করে। পরে আসামি শামিম শিকদার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। এ ঘটনায় মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করে এ রায় দেন।
এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (অতিরিক্ত পিপি) অ্যাডভোকেট অজয় কুমার চক্রবর্তী বলেন, আপন ছেলেকে মা-বাবা মিলে হত্যা করায় অপর ছেলে বাদী হয়ে গজারিয়া থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় আদালত মা-বাবাকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডসহ অপর দণ্ডবিবিধি ২০১ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচ বছরের সশ্রম করাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও পাঁচ মাসের বিনাশ্রম করাদাণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। আদালতের রায়ে আমরা রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট।