সাবেক যুগ্ম সচিবের মেয়ে ১২ বছরে ৮০০ মুঠোফোন চুরি করেছেন : ডিবি
জুবায়দা রহমান। তিনি বিভিন্ন সময় রাজধানীর অভিজাত পাড়ায় ভুয়া পরিচয়ে হোটেল, ক্লাবে সেমিনার ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে দামি জিনিসপত্র চুরি করতেন। ১২ বছর ধরে তিনি এভাবে চুরি করে আসছিলেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৮০০ মুঠোফোন, ল্যাপটপ, স্বর্ণালঙ্কার, টাকা-পয়সা ও দামি ভ্যানিটি ব্যাগ চুরি করেছেন। জুবাইদার বাবা ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক যুগ্ম সচিব।
তবে, বাবা যুগ্ম সচিব হলেও তিনি মূলত চোর। তার এমন কর্মকাণ্ডের কারণে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় তাকে। তারপরও এমন কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারেননি। অবশেষে শেষ রক্ষা হয়নি। ঢাকা ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে নারী চিকিৎসকের মোবাইলফোন ও ব্যাগ চুরি করে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়তে হয়েছে তাকে।
গতকাল শুক্রবার জুবায়দাকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার থেকে চুরির নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য জানতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটি। আজ শনিবার (১৬ মার্চ) সকালে ডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলক করে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘জুবায়দার বাবা পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক যুগ্ম সচিব ছিলেন। কিন্তু এমন অভ্যাসের কারণে তার (জুবায়দা) বাবা তাকে বাসা থেকে বের করে দেন।’
হারুন অর রশীদ জানান, মূলত যেসব ক্লাবে কর্মজীবী নারীরা প্রোগ্রাম করেন জুবায়দা সেগুলোতে যান। এরপর সুযোগ বুঝে ব্যাগ, টাকা ও যা যা পায় নিয়ে যান। এসব জিনিসের কিছু নিজে ব্যবহার করেন, আবার কিছু তার দ্বিতীয় স্বামীর মাধ্যমে বিক্রি করতেন।
ডিবি পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ঢাকা ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে জুবায়দা এক নারী চিকিৎসকের ফোন চুরি করেন। এরপর সেই ফোন থেকে ক্যানসারের রোগীকে ফোন করে দ্রুত টাকা পাঠাতে বলেন। ওই রোগীর স্বজনরা বিশ্বাস করে দ্রুত টাকা পাঠান। বিষয়টি জানতে পেরে ওই চিকিৎসক পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। তার অভিযোগে জুবাইদাকে শনাক্ত করতে একজন নারী কনস্টেবলকে নিযুক্ত করা হয়। তিনি নারী ক্যানসার রোগী সেজে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন তার কাছেও জুবায়দা টাকা চায়।’
হারুন অর রশীদ জানান, জুবায়দা ১২ বছরে ৮০০ মোবাইল ফোন ও ব্যাগ চুরি করেছেন। তার টার্গেট হলো উত্তরা ক্লাব, শেরাটন হোটেল ও ঢাকা ক্লাবসহ অভিজাত ক্লাবে চুরি করা। তবে এসব ব্যাগ ও মোবাইলের অধিকাংশই তিনি বিক্রি করেছেন। আবার পছন্দের জিনিসগুলো ব্যবহার করতেন। ফলে তার পোশাক ও ব্যবহারকৃত জিনিস দেখে হয়তো অনেকে তাকে সন্দেহ করতেন না।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জানান, জুবায়দা কোন কোন হোটেল যান এবং কীভাবে রেজিস্ট্রেশন করতেন তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া অভিজাত হোটেলের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে তার কোনো সখ্যতা আছে কি না তাও তদন্ত ও যাচাই করা হবে। তাকে কারা সহায়তা করতো তাও খতিয়ে দেখা হবে।