কুমিল্লায় ছোট হয়ে আসছে খাদির বাজার
দক্ষ কারিগর, প্রশিক্ষণ, সংরক্ষণ ও যথাযথ বাজারজাতকরণের অভাবে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী পণ্য খাদির বাজার। তাঁতের তৈরি খাদিতে এখন লেগেছে মেশিনের ছোঁয়া। হাতে বোনা তাঁতের আসল খাদি এখন বিলুপ্তির পথে। বর্তমানে গুটিকয়েক তাঁত টিকে আছে। আর এতেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে খাদির দৈন্যতা।
একসময় কুমিল্লার দেবিদ্বার, চান্দিনা ও মুরাদনগর উপজেলায় হাজারের বেশি তাঁত ছিল। সেসব তাঁতের তৈরি কাপড় থেকে খাদির পাঞ্জাবী, ফতুয়া ও কাপড় তৈরি হতো। এসব পোশাক কুমিল্লা থেকে চলে যেত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আর এতেই কুমিল্লার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে খাদির শহর হিসেবে। সেই তাঁত এখন বিলুপ্তির পথে, হারিয়ে যাচ্ছে আসল খাদিও।
সরেজমিনে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বড় কামতা গ্রামে গিয়ে জানা যায় তাঁত এবং এর সঙ্গে জড়িতদের নানান সংকট। বড়কামতা গ্রামের দুই ভাই চিন্তাহরণ ও রণজিৎ দেবনাথ। স্বাধীনতার আগ থেকে তারা তাঁতের তৈরি খাদির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। কেন আসল খাদি বিলুপ্তির পথে কেনইবা খাদির বাজার বাড়ছে না, জানতে চাইলে তাঁতি চিন্তাহরণ দেবনাথ বলেন, ‘এখন মেশিনে বোনা হয় খাদি। তাঁতের খাদি ও মেশিনের খাদি দেখতে একই রকম হলেও গুণে-মানে অনেক তফাৎ রয়েছে।’ তিনি আরও জানান, এখন কুমিল্লার বাজারে তাঁতের খাদি অনেক কম। মেশিনের খাদিই বেশি।
খাদির এই সংকটের জন্য দায়ী যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাব বলে মনে করেন চিন্তাহরণের ভাই রণজিৎ দেবনাথ। তিনি বলেন, ‘এক সময় হাজার তাঁতি ছিল এ অঞ্চলে। নারীরা চরকায় সুতা কাটত, তাঁত বুনে যে আয় হতো, তা দিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ চলত। এখন দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতি, তুলার সরবরাহ কম এবং সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় খাদির বাজার ছোট হয়ে আসছে। তাঁতিরা এখন অন্য পেশায় ঝুঁকছেন।’
রণজিৎ দেবনাথের ছিল আটটি তাঁত। একটি ছাড়া সবই বন্ধ। শখের বশে দুই–এক থান বুনেন তিনি। স্মৃতির ডায়েরি হাতরিয়ে রণজিৎ বলেন, ‘এক সময় পুরো গ্রামের বাড়ি বাড়ি চরকায় সুতা কাটার শব্দ শোনা যেত, শত শত পিস থান কাপড় বেরিয়ে আসত। কতশত ব্যস্ততা ছিল তাঁত পাড়ায়। কত আনন্দ বেদনার গল্প লুকিয়ে ছিল। এখন সেই তাঁত নেই। তাঁতের সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে আসল খাদি কাপড়। এখনই যদি সংকট থেকে উত্তরণে পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে আসল খাদির সুতা কাটা ও বুনন একেবারে হারিয়ে যাবে।’
কুমিল্লার শত বছরের ঐতিহ্য খাদির জৌলুস ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান জানালেন আশার কথা। জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমরা খাদিকে ফিরিয়ে আনার জন্য পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়কে গুরত্বের সঙ্গে জানানোর চেষ্টা করব। এ ছাড়াও কুমিল্লার খাদিকে ভৌগলিক স্বত্ব (জিআই) স্বীকৃতির জন্য আবেদনের চেষ্টা করছি।’