বড় মনিরের বিরুদ্ধে আবারও ধর্ষণের অভিযোগে মামলা
টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও টাঙ্গাইল জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের বিরুদ্ধে এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে উত্তরার প্রিয়াংকা সিটির ৬ নম্বর সড়কের ৭ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে। গোলাম কিবরিয়া টাঙ্গাইল-২ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের বড় ভাই।
তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা আনোয়ার আজ শনিবার (৩০ মার্চ) বিকেলে এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, তরুণীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। পরে আজ (শনিবার) মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে।
মোস্তফা আনোয়ার আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে ভুক্তভোগী তরুণী বলেছেন, তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে। ফেসবুকের মাধ্যমে বড় মনিরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। দুদিন আগে তিনি ঢাকায় আসেন। গতকাল তাকে তুরাগের একটি বাসায় ধর্ষণ করা হয় বলে তিনি মামলায় অভিযোগ করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সূত্র ধরে গত প্রায় দুই মাস আগে বড় মনিরের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর উত্তরার জমজম টাওয়ারে তাদের প্রথম দেখা হয়। গতকাল রাতে রেস্টুরেন্টে দেখা করার কথা বলে ভুক্তভোগীকে তুরাগ থানার প্রিয়াংকা সিটিতে নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে যান বড় মনির। সেখানেই তাকে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী।
ওই তরুণী আরও বলেন, উনি আমাকে অস্ত্র দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে। আমি বারবার ওনার কাছে মাফ চেয়েছি, যাতে আমার কোনো ভুল থাকলে আমাকে মাফ করে দেয়। তবু রেহাই মেলেনি।
পরে ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী ওই ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে ৯৯৯ কল করলে পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে। এরই মধ্যে ওই বাসার সিসি ক্যামেরাও জব্দ করা হয়েছে।
ওই তরুণীর দাবি, গতকাল শুক্রবার তার সঙ্গে দেখা করতে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের অ্যাপেক্স শোরুমের পাশে যান তরুণী। ওই সময় বড় মনির একটি গাড়ি নিয়ে আসে। পরে গাড়ি ছেড়ে দিয়ে আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে রিকশায় করে ঘটনাস্থলে এনে ধর্ষণ করে।
পুলিশ জানিয়েছে, পরে রাত আড়াইটার দিকে ভুক্তভোগী তরুণীকে তুরাগ থানার পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বাড়ির গার্ড বকুলকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয় পুলিশ।
ভুক্তভোগীকে থানায় নিয়ে গেলে আসামিকে অজ্ঞাত উল্লেখ করে অভিযোগ নেয় পুলিশ।
এ বিষয়ে তুরাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাঈদ মিয়া বলেন, ঘটনা বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলছে।
গত বছরের ৫ এপ্রিল রাতে টাঙ্গাইল শহরের এক কিশোরী বাদী হয়ে বড় মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করে। টাঙ্গাইল মডেল থানায় দায়ের করা মামলায় বলা হয়, জমি নিয়ে বিরোধ সমাধানের জন্য বড় মনিরের শরণাপন্ন হয় ওই কিশোরী। বড় মনির সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।
পরে ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর ওই কিশোরীকে শহরের আদালতপাড়ায় বড় মনির তার বাড়ির পাশে একটি ফ্ল্যাটে যেতে বলেন। সেখানে গেলে কিশোরীকে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা পর বড় মনির কক্ষে ঢুকে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন এবং সেই ছবি তুলে রাখেন।
ধর্ষণ শেষে কাউকে এ কথা জানাতে নিষেধ করেন বড় মনির। কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকিও দেন তিনি। এরপর ছবি প্রকাশের ভয় দেখিয়ে প্রায়ই মেয়েটিকে বড় মনির ধর্ষণ করতেন বলেও উল্লেখ করা হয় মামলার অভিযোগে।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, ধর্ষণের কারণে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে বড় মনির তাকে গর্ভপাত করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। রাজি না হওয়ায় গত বছরের ২৯ মার্চ রাত ৮টার দিকে বড় মনির মেয়েটিকে আদালতপাড়ায় তার শ্বশুরবাড়িতে তুলে নিয়ে যান। সেখানে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ দেন তিনি। এতেও রাজি না হওয়ায় ওই বাসার একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয় মেয়েটিকে।
সেখানে আবারও ধর্ষণ করেন বড় মনির। ধর্ষণের পর ভুক্তভোগী কিশোরীকে বড় মনিরের স্ত্রী মারধর করলে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে রাত ৩টার দিকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয় তাকে। এরপর থেকে ওই কিশোরীকে নানা হুমকি দেওয়া হতো। শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় মামলা করতে দেরি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করে বাদী।
পরে জন্ম নেওয়া পুত্রসন্তানের ডিএনএ টেস্ট করা হলে দেখা যায়, শিশুটির সঙ্গে বড় মনিরের ডিএনএ মেলেনি। অর্থাৎ শিশুটির জৈবিক (বায়োলজিক্যাল) পিতা বড় মনির নন। এর ভিত্তিতে গত বছরের ৯ অক্টোবর ডিএনএ টেস্টের প্রতিবেদনটি উপস্থাপনের পর শুনানি শেষে বড় মনির জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।
এর পর ওই বছরের ১৮ নভেম্বর বিকেলে টাঙ্গাইল শহরের বোয়ালী এলাকা থেকে বড় মনিরের বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ মামলার ওই বাদীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।