নওগাঁয় যমুনার বুকে পলো দিয়ে মাছ ধরা উৎসব
চৈত্র মাস। খাল-বিল, নদী নালা ও ডোবার পানি কমতে শুরু করেছে। এসব জলাশয়ে এখন স্বল্প পানি। ইরি-বোরো ধান আধা-পাকা অবস্থা। এ সময় অনেকের হাতে তেমন একটা কাজ থাকে না। অবসর সময়ে শৌখিন মাছ শিকারিরা দলবদ্ধ হয়ে পলো বা হাউরি নিয়ে জলাশয়গুলোতে মাছ শিকারের জন্য বের হন। মাছ পাওয়া বা না পাওয়া বড় কথা না। সবাই একসঙ্গে মাছ শিকার করতে বের হওয়ায় আনন্দের। বাঁশের তৈরি পলো নিয়ে নওগাঁ জেলার কয়েক গ্রামের শতশত মানুষ দলবেঁধে নামে ছোট যমুনার হাঁটু পানিতে। তাদের পলোর নিচে ধরা পড়ে নানা জাতের দেশিয় মাছ। এ সময় এক উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। সে উৎসব দেখতে হাজির হয় আশপাশের হাজারো মানুষ।
নওগাঁ সদর উপজেলার ছোট যমুনা নদীর শীবপুর এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) দুপুরের দিকে একদল শৌখিন শিকারি নদীতে নেমে মাছ শিকার করছে। মাথা ও কোমরে আটসাট করে গামছা বেঁধে অনেকটা আনন্দ নিয়েই নদীতে নেমেছে। যাদের অধিকাংশই যুবক। সকাল থেকে শুরু হয়ে চলে বিকেল পর্যন্ত। ধরা পড়ে শোইল, টাকি ও বোয়াল।
শীবপুর গ্রামের বাসিন্দা জুয়েল হোসেন জানান, কোথায় পলো দিয়ে মাছ ধরা হবে তা আগেই গ্রামের হাটে সবাইকে বলে দেওয়া হয়। এরপর সকালে সবাই পলো নিয়ে বেরিয়ে পরা হয়। বাপ-দাদার সময় থেকে প্রতি বছর পলো দিয়ে মাছ ধরছে সবাই। কারও পলোতে মাছ ধরা পড়ে আবার কারও হয়না। মাছ পাওয়াটা বড় কথা না। বড় কথা সবাই আনন্দ করে।
বদলগাছী উপজেলার বালুভরা গ্রামের নিপেন্দ্রনাথ দত্ত বলেন, ‘গ্রাম থেকে অন্তত ছয় কিলোমিটার দূরে এখানে মাছ শিকার করতে এসেছি। দলবদ্ধভাবে মাছ ধরতে আমাদের ভালো লাগে।’
সদর উপজেলার কুমাইগাড়ী এলাকার জাহিদুল হক বলেন, ‘ছোট বেলায় বাবার সঙ্গে পলো দিয়ে এভাবে নদীতে মাছ ধরতাম। এখন তো বয়স প্রায় ৬০। তবুও মাছ ধরা উৎসব হবে জানার পর না এসে আর থাকতে পারলামনা। আগে তো নদীতে বড় বড় নানা জাতের মাছ পাওয়া যেত। এখন অনেক সময় নদীতে পানি থাকেনা। মাছও তেমন পাওয়া যায়না।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. আমিমুল এহ্সান বলেন, ‘নওগাঁয় ছোট-বড় অসংখ্য নদ-নদী ও খাল-বিল রয়েছে। ছোট যমুনা নদী, পুণর্ভবা নদী, আত্রাই নদী, তুলশীগঙ্গা, শিব নদী, ফকিরনি নদী এবং নাগর নদী। বিল মুসছুর, গুটার বিল, দীঘলির বিল, জবই বিলসহ অসংখ্য ছোট বিলও আছে এখানে। তাই গ্রামের মানুষ পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসবে মেতে ওঠে। এটি গ্রামবাংলার প্রাচীন উৎসবের একটি অংশ। নতুন প্রজন্মের অনেকেই এই উৎসবের আনন্দ উপভোগ করে।’