কুমিল্লার গোমতীতে মাছ ধরা উৎসব
চারদিকে ফাগুনের ঝিরঝিরে বাতাস। ধুলা উড়ছে। বেলা ১১টা। গোমতীর নদীর পাড়ে জড়ো হয়েছেন বেশ কয়েকজন। তাদের কারো হাতে পলো, কারো হাতে কনুই জাল। কেউবা এসেছেন বেড় জাল নিয়ে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মৎস্য শিকারিদের ভিড় বাড়ছে।
বছরের ফাগুন ও চৈত্র মাসে গোমতীর পানি কমে তলানিতে জমা হয়। সেই সময়টাতে গোমতীর বুকে চলে মাছ শিকারের উৎসব। সোমবার এমন মৎস্য উৎসবে যোগ দিতে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে শিকারিরা ভিড় করেন।
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী কটক বাজার। গোমতীর এই অংশ দিয়ে অন্তত পাঁচশ সৌখিন মৎস্য শিকারি পানিতে নেমে পড়লেন। হৈ-হৈ রবে চারদিক মাতিয়ে তুললেন। কেউ কনুই জাল ছুড়ছেন, কেউবা হাতের পলো চেপে ধরছেন পানিতে।
জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ারা এলাকা থেকে এসেছেন আবদুর রহিম। তিনি জানান, বছরের এই সময়ে তারা দলবেঁধে আসেন গোমতী নদীতে। তার আগে সবার সাথে মোবাইলফোনে কথা হয়। রহিম জানান, আজ গোমতীতে বোয়াল, বাগা আইড়, কার্প ও কালিবাউশ মাছ পাওয়া গেছে।
নাঙলকোট উপজেলা থেকে আসা কয়েকজন সৌখিন মৎস্য শিকারি জানান, তারা সর্দারের ফোন পেয়ে এসেছেন। এবার নদীতে বড় কার্প ও গ্রাসকাপ মাছ পাওয়া যাচ্ছে।

মাছ শিকার দেখতে আসা আবুল হোসেন জানান, মাছ শিকার দেখতে আসছি। একটি ৮ কেজি ওজনের গ্রাস কার্প মাছ ধরা শেষে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
জহিরুল হক বাবু জানান, একটি ১০ কেজি ওজনের কার্প মাছ ১০ হাজার টাকা বিক্রি করতে বললেও শিকারি বিক্রি করতে রাজি হলেন না।
গবেষক ও লেখক আহসানুল কবীর বলেন, ‘গোমতীতে মাছ ধরার উৎসবটি আমাদের শত বছরের ঐতিহ্য। এক সময় গোমতীতে বড় বোয়াল, বাঘাইড়, চিতল, কালিবাউশ, রুই, কাতল পাওয়া যেত। যেগুলো নগরীর রাজগঞ্জ বাজারে বিক্রি হতো। তবে সময়ের পরিক্রমায় কমেছে গোমতীর পানি ও মাছের আনাগোনা। এখন যৎসামান্য কিছু মাছ পাওয়া যায়। যদি গোমতীকে শাসন না করে পরিকল্পনা অনুযায়ী খনন করা যেত, তাহলে গোমতী তার আগের রূপ ফিরে পেত। জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ হত।