চ্যালেঞ্জের মধ্যেই বাংলাদেশে বাস্তব অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি : এডিবির জলবায়ু দূত
দেশজুড়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর উপায় নিয়ে বাংলাদেশকে পরামর্শ দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এডিবির জলবায়ু দূত ওয়ারেন ইভান্স বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জ্বালানির চাহিদা বৃদ্ধি।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ মানুষের জন্য, বিশেষ করে নারীদের জন্য তীব্র তাপের ঝুঁকি মোকাবিলায় সচেতনতা তৈরিতে ইতোমধ্যে বেশ ভালো পদক্ষেপ নিচ্ছে। জলবায়ুর প্রভাবের মুখে টিকে থাকতে ও অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যেতে আগামী বছরগুলোতে বিনিয়োগ প্রয়োজন। এজন্য বড় ধরনের বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে।
ওয়ারেন এডিবির জলবায়ু অর্থায়নের মাত্রা এবং প্রভাবকে অনুকূল করতে বিস্তৃত নির্দেশিকা দেন। এরমধ্যে রয়েছে নতুন, অতিরিক্ত প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সংস্থান সংগ্রহ, এডিবির বাহ্যিক জলবায়ু অংশীদারিত্ব জোরদারের কথা বলেছেন তিনি। নির্দেশিকায় তিনি আন্তর্জাতিক জলবায়ু চুক্তি ও উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ততা জোরদার করা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য সক্ষমতা উন্নয়ন জোরদার করার কথাও বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে এডিবির জলবায়ু দূত বলেন, এর জন্য অনেক নীতি ও নিয়ন্ত্রক সংস্কারের প্রয়োজন হবে। এডিবির জলবায়ু দূত বাংলাদেশের সঙ্গে একটি নীতিভিত্তিক ঋণের (পিবিএল) কথা উল্লেখ করেন, যাতে এসব নীতি ও নিয়ন্ত্রক সংস্কারের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশে এডিবির সিস্টেমের জন্য একটি নতুন দিকনির্দেশনা দেয়, যা মূলত জলবায়ু কার্যক্রমের ওপর গুরুত্ব দেয়।
জলবায়ু দূত বলেন, ‘সুতরাং, অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে আমরা দারুণ বাস্তব অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি।’ তিনি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নারী ও মেয়েদের ওপর তাপজনিত চাপের প্রভাব আরও ভালোভাবে বুঝতে ও অভিযোজনে বিনিয়োগের জন্য সম্প্রতি চালু হওয়া ‘জেন্ডার অ্যান্ড হিট ইনিশিয়েটিভ’-এর কথা উল্লেখ করেন।
নতুন কারিগরি সহায়তা কর্মসূচির আওতায় এডিবি দেখেছে কীভাবে তাপজনিত চাপের ক্রমবর্ধমান হুমকি নারীদের প্রভাবিত করে ও সুনির্দিষ্ট নীতি, পদক্ষেপ ও বিনিয়োগ চিহ্নিত করে, যা সরকারকে নারী ও মেয়েদের ওপর তাপের প্রভাব কমাতে সহায়তা করতে পারে।
এই উদ্যোগটি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে সমস্ত নতুন কার্যক্রমে তাপ কর্ম-পরিকল্পনাকে সমন্বিত করা, নারীদের জলবায়ু সহনশীলতা বাড়ানোর দিকে মনোনিবেশ করা এবং লিঙ্গ-প্রতিক্রিয়াশীল পদক্ষেপের পক্ষে এডিবির সমর্থন করার প্রতিশ্রুতিকে তুলে ধরে। এই কর্মসূচিটির অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও তাজিকিস্তান।
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে বিশ্বব্যাপী বার্ষিক ৬৫০ বিলিয়ন ঘণ্টারও বেশি শ্রম হ্রাসের সম্পর্ক রয়েছে, যা প্রায় ১৪৮ মিলিয়ন পূর্ণকালীন চাকরির সমতুল্য। এমনকি, এটি কোভিড-১৯ মহামারির সময় ব্যাঘাত হওয়া সময়ের সঙ্গে তুলনীয়। নারীরা এই ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রভাবিত হয়। জীবন-হুমকির মধ্যে পড়াসহ যথেষ্ট আর্থ-সামাজিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
এই কর্মসূচিটি অভিযোজনের জন্য ৩৪ বিলিয়ন ডলারসহ ২০১৯ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত নিজস্ব সম্পদ থেকে জলবায়ু অর্থায়নে ১০০ বিলিয়ন ডলার সরবরাহের বিশ্বব্যাংকের উচ্চাকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
২০২২ সালে এডিবি জলবায়ু অর্থায়নে ৭১০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যার মধ্যে প্রশমনের জন্য ৪৩০ কোটি ডলার এবং অভিযোজনের জন্য ২৮০ কোটি ডলার রয়েছে। ব্যাংকটি গত বছর বেসরকারি খাত থেকে জলবায়ু অর্থায়নে অতিরিক্ত ৫৪৮ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে।
ওয়ারেন বলেন, ঝড়, বন্যা ও খরার মতো জলবায়ুর প্রতিটি প্রভাবের জন্য বাংলাদেশ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ‘বাংলাদেশ এসবের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।’ তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অত্যন্ত গুরুতর পদক্ষেপ নিয়েছে, যাতে যেকোনো দুর্যোগ এলে কম প্রভাব নিশ্চিত করে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের বিশেষ জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা (জলবায়ু পরিবর্তন) বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ও ভারত অনেক এগিয়ে গেছে। দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই দেশ থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশ শিক্ষা নেবে। তিনি বলেন, তীব্র তাপজনিত সমস্যা প্রশমিত করতে মোটামুটি কিছু সহজ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এর জন্য আরও শেড এবং সকাল বেলার জন্য ব্যবস্থা প্রয়োজন হবে। যাতে নিয়োগ কর্তারা তাদের কর্মীদের উত্তাপ সম্পর্কে সচেতন করতে পারেন। তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলে পানি সবার জন্য সহজলভ্য করা যায়। অনেক কিছুই করার আছে।