চুন্নুকে কড়া জবাব দিলেন ব্যারিস্টার সুমন
আলোচিত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নুর কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, ‘সংসদে চুন্নুর অবস্থান পরিষ্কার নয়। বিরোধী দল দাবি করলেও তিনি থাকেন সরকারি দলের ভেতরে। এখন এসেছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের মুখ বন্ধ করতে।’
আজ বুধবার (৮ মে) সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ব্যারিস্টার সুমন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন।
সায়েদুল হক সুমন আরও বলেন, ‘যদিও আমি এলাকা থেকে নির্বাচন করেছি, কিন্তু সারা দেশের মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যারা আমাকে চেনেন, তারা আমার জন্য দোয়া করেছেন। আমার ইচ্ছা ছিল, এমপি হলে যেসব জিনিসগুলো প্রকাশ পেলে জাতির ভালো হয়, দেশের ভালো হয়, সেগুলো আমি প্রকাশ করব। এরই ধারাবাহিকতায় এমপি হওয়ার পর জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার আমাকে যা যা দিয়েছেন, আমি এগুলো প্রকাশ করেছি। আমি আগে জানতাম না এমপিরা কত সম্মানি পান, আমি মনে করি এগুলো প্রকাশ করলে স্বচ্ছতা প্রকাশ পায়। আমি আমার বেতনের কথা বলেছি, আমি কত টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। আমি মনে করি, এমপি হিসেবে বরাদ্দের টাকার আমি ট্রাস্টি। স্বচ্ছতার জন্য আমি বলেছি, আমি এত এত টাকা পেয়েছি। কিন্তু এটা বিরোধী দলের চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু সাহেব সংসদের স্পিকারের কাছে বিচার দিলেন। যেহেতু তিনি পয়েন্ট অর্ডারে কথা বলেছেন, আমি জবাব দেওয়ার সুযোগ পাই নাই। আমার প্রশ্ন হচ্ছে তিনি বিরোধিতা করবেন সরকারি দলের, কিন্তু তিনি বিরোধিতা শুরু করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর। তিনি তো আরও খুশি হওয়ার কথা। কারণ আমরা আমাদের হিসাব দেওয়া শুরু করেছি।’
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘মুজিবুল হক চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর। তার মুখে সমালোচনা মানায় না। এমপিরা কত বরাদ্দ পান তা জনগণের জানার অধিকার আছে। আমি সেটা প্রকাশ করেছি। এতে চুন্নু সাহেবের সমস্যা কোথায়?’
এ সময় ব্যারিস্টার সুমন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, সংসদ সদস্য হিসেবে বরাদ্দ পাওয়ার বিষয় তিনি ফেসবুকে প্রকাশ করে যাবেন।
বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু আলোচিত আইনজীবী ও সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে নালিশ দেন। চুন্নুর দাবি, ব্যারিস্টার সুমন এমপি হিসেবে পাওয়া সম্মানী ভাতা ও বরাদ্দের তথ্য ফেসবুকে প্রচার করায় সব সংসদ সদস্য ভুক্তভোগী হয়েছেন। এই কর্মকাণ্ডে বাকি ৩৪৯ জন সংসদ সদস্য সম্পর্কে জনগণের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি অবশ্য বক্তব্যে ব্যারিস্টার সুমনের নাম উল্লেখ করেননি।
বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ বলেন, ‘আমাদের হাউসের একজন সংসদ সদস্য, নামটা বলতে চাই না। তিনি নতুন নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ফেসবুকে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে আমরা সবাই ভুক্তভোগী।’
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “তিনি (সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সুমন) বলেছেন, আপনারা জানেন, এমপিরা কত টাকা বেতন পান? তারা তো বলে না, গোপন করে। ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা বেতন (মাসিক) পেয়েছেন। আমরা কত টাকা বেতন পাই, তা লুকানোর কিছু নেই, ওয়েবসাইটে গেলে পাওয়া যাবে।”
স্পিকারের উদ্দেশে চুন্নু আরও বলেন, ‘ওই সংসদ সদস্য বলেছেন, তিনি তিন মাসে ২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছেন। এই ২৮ কোটি টাকা কি আমি পেয়েছি, আপনি (স্পিকার) পেয়েছেন? প্রধানমন্ত্রী পেয়েছেন? ইতোমধ্যে ফেসবুক দেখে আমাকে অনেকেই বলছেন, ২৮ কোটি টাকা পেয়েছেন, এই টাকা কই?’
বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘তিনি (ব্যারিস্টার সুমন) বলেছেন, এমপি হলে যদি এত লাভ হয়, তাহলে আরও আগে এমপি হতাম।’ স্পিকারের উদ্দেশে চুন্নু বলেন, ‘কোনো সংসদ সদস্য যদি এমন কোনো কথা বলেন, যে কথায় প্রধানমন্ত্রী, স্পিকারসহ ৩৪৯ জন এমপি সম্পর্কে ভুল বার্তা যাবে। তার সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন করার জন্য যদি এ ধরনের কথায় ভুল বার্তা যায়, বিষয়টা আপনি দেখতে পারেন। আমরা এখানে অনেক কথা বলব, বিতর্ক করব। এমন কথা বলবার অধিকার নেই, যাতে ৩৪৯ জন এমপির ইজ্জত যাবে। তাই অভিভাবক হিসেবে ওই সংসদ সদস্যকে ডেকে তাকে কী করবেন, একটা ব্যবস্থা নেবেন।’
গত ৮ এপ্রিল ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সংসদ সদস্যদের বেতন-ভাতা সংক্রান্ত ওই স্ট্যাটাসটি দিয়েছিলেন।