ছোট যমুনায় ধান চাষে জীবিকানির্বাহ শতাধিক কৃষকের
দেখে মনে হবে হাজার বিঘার মাঠ। সেখানে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্নের সোনালি ফসল ধান। আর সেই ধান কাটছে বেশ কয়েকজন কৃষক। তারা নিজেরাই যেন শ্রমিক। আবার একজনকে গরু চড়াতেও দেখা যায়। চিত্রটি নওগাঁর খরস্রোতা ছোট যমুনা নদীতে।
গতকাল বৃহস্পতিবার চোখে পড়ে নদীর বুকে ধান চাষ। শুকিয়ে যাওয়ায় জেলার বদলগাছী উপজেলার তেজাপাড়া-কাদিবাড়ি পাশাপাশি দুটি এলাকায় ধান চাষ করেছেন শতাধিক কৃষক। এ সময় নদীর বুকে কয়েকজনকে ধান কাটতে দেখা যায়। আবার অনেক জায়গা থেকে ধান কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সেখানে কথা হয় কৃষক তসলিম উদ্দিন, আফজাল হোসেন, রফিকুল ইসলাম, শামিম হোসেন ও গোলাম মোস্তফার সঙ্গে। তাঁরা বললেন, ‘আমরা পাঁচ-সাতজন মিলে বেশ কিছু জায়গায় ধান চাষ করেছি। তাই নিজেরাই ধান কাটছি। এই ধান দিয়ে আমাদের সারা বছরের সংসার চলে। অবশ্য বৃষ্টির কারণে পানি জমতে শুরু করেছে। আর কয়েকদিন পর পানিতে ভরে যাবে নদীটি।’
তারা জানালেন, উত্তর দিকের তেজাপাড়া ব্রিজ থেকে দক্ষিণে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় শতাধিক কৃষক এই নদীর বুকে ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।’
নদীর বুকে গরুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে এসেছেন এক যুবক। তিনি বললেন, এই নদী শুকিয়ে গেছে। নদীতে থাকবে পানি, আর মাঠে হবে ধান। এমন দৃশ্যই ভালো লাগবে সবার। আর যে যার মতো সুবিধা খুঁজবে—এটাই তো স্বাভাবিক।
নওগাঁর নদী, খাল-বিল দখল ও দূষণের প্রতিবাদে বিভিন্ন সময় রাস্তায় নামা সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট ডি এম আব্দুল বারী বলেন, ‘বিভিন্ন নদী, খাল-বিল, প্রাকৃতিক বনায়নে ভরপুর আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ। কিন্তু আমাদের বিরূপ আচরণের কারণে আমরা নিজেরাই প্রকৃতিকে বিভিন্ন ভাবে ধ্বংস করে ফেলছি। নওগাঁসহ সারা দেশের নদী, খাল-বিল দখল ও দূষণের জন্য সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি জনসচেতনতাও এর জন্য দায়ী। তবে নদী শুকিয়ে গেলে সেখানে ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করা সেটা খারাপ কিছু না। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের অনুমতি নিয়ে চাষ করলে ভালো হয়। এতে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে।’
জানতে চাইলে বদলগাছী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাবাব ফারহান বলেন, বোরো মৌসুমে বদলগাছী উপজেলায় ১১ হাজার ৭৪০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এ ছাড়া নদীর ধারে উল্লেখযোগ্য হারে ধান উৎপাদিত হয়েছে। কারণ নদীর পাশের জমিতে পলির আস্তরণ জমে এবং সেখানে জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই সেখানে ধান, সবজিসহ সব ধরনের ফসল ভালো হয়ে থাকে।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান বলেন, ছোট যমুনা নদীসহ কয়েকটি নদী ও খাল পুনঃখননের জন্য আবেদন দেওয়া আছে। অনুমোদন পেলে যেকোনো সময় কাজ শুরু হবে।