ভৈরবে র্যাবের হেফাজতে নারীর মৃত্যুর অভিযোগ
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে র্যাব হেফাজতে সুরাইয়া খাতুন (৫২) নামে এক নারীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার ১২ ঘণ্টা পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জাহানের উপস্থিতিতে মরদেহের প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।
গতকাল শুক্রবার (১৭ মে) সকাল ৭টার দিকে র্যাব সদস্যরা সুরাইয়া খাতুনকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সুরাইয়া খাতুন ওই উপজেলার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের বরুনাকান্দি গ্রামের আজিজুল ইসলামের স্ত্রী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে সুরাইয়া খাতুন ও তার ছেলে তাইজুল ইসলামকে (২৩) ময়মনসিংহের নান্দাইল থানা পুলিশের সহযোগিতায় একটি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, দেড় বছর আগে একই উপজেলার ভেড়ামারি গ্রামের রেখা আক্তারের সঙ্গে আসামি তাইজুল ইসলামের বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু রেখার পরিবারের অভিযোগ, বিয়ের পর থেকে স্বামী তাইজুল দুই লাখ টাকা যৌতুকের জন্য রেখাকে চাপ দিতে থাকে। পরে রেখার পরিবার এক লাখ ৮০ হাজার টাকা দিলেও তিনি অটোরিকশা কিনেননি। পরে আরও এক লাখ টাকা যৌতুক দাবি করলে টাকা দিতে অস্বীকার করেন তারা। এর মধ্যেই রেখা অন্তঃসত্ত্বা হন। গত ২৬ এপ্রিল রাতে রেখাকে যৌতুকের টাকার জন্য তার স্বামী তাইজুল ইসলাম, শ্বশুর আজিজুল ইসলাম ও শ্বাশুড়ি সুরাইয়া খাতুন নির্যাতন করে আহত করে। তারপর রাতেই তাকে আহত অবস্থায় পাশের ইশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় তার স্বামী ও শাশুড়ি সুরাইয়া খাতুন হাসপাতালে মরদেহ রেখে পালিয়ে যায়। তবে শ্বশুর আজিজুল ইসলামকে হাসপাতালের কর্মচারীরা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরে রেখার পরিবারের লোকজন মরদেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে ময়নাতদন্তের পর দাফন করেন। তারপর থানায় তারা হত্যা মামলা দিতে গেলে পুলিশ অপমৃত্যু মামলা নেয়।
পরে গত ২ মে ময়মনসিংহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্বামী, শ্বাশুড়ি ও শ্বশুরকে আসামি করে মামলা করেন রেখার মা রমিছা বেগম। আদালতের বিচারক মামলার শুনানি শেষে নান্দাইল থানার ওসিকে মামলাটি এফআইআর করে তদন্তের নির্দেশ দিলে গত ১৩ মে নান্দাইল থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয় (মামলা নং ১৫)। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছেন নান্দাইল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হাসান। এরপর ভৈরবে র্যাব ক্যাম্পের সদস্যরা গত বৃহস্পতিবার রাতে নান্দাইল থানায় গিয়ে পুলিশের মাধ্যমে শাশুড়ি সুরাইয়া খাতুন, স্বামী তাইজুল ইসলাম ও শ্বশুর আজিজুল ইসলামকে ডেকে আনেন। এ সময় শ্বশুরকে ছেড়ে দিয়ে বাকি দুজনকে আটক করে ভৈরব র্যাব ক্যাম্পে নিয়ে আসে। এরপর শুক্রবার সকালে সুরাইয়া খাতুনকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান র্যাব সদস্যরা। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রেখার স্বামী তাইজুল ইসলাম বর্তমানে র্যাবের হাতে আটক রয়েছে।
মারা যাওয়া সুরাইয়া খাতুনের স্বামী আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘রেখা আক্তার ফাঁসিতে আত্মহত্যা করেছে। তারপরও তার পরিবার মামলা করেছে। আমরা আইনিভাবে মোকাবিলা করব। বৃহস্পতিবার রাতে নান্দাইল থানায় পুলিশ আমাদেরকে ডেকে নিয়ে র্যাবের হাতে আমার স্ত্রী ও ছেলেকে তুলে দেয়। পরে শুক্রবার সকালে খবর পেলাম আমার স্ত্রী (সুরাইয়া) র্যাবের হেফাজতে থেকে মারা গেছেন।’
ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘শুক্রবার সকাল ৭টায় র্যাবের সদস্যরা সুরাইয়া খাতুন নামে এক নারীকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তাকে আনার পর কর্তব্যরত ডাক্তার বিনিত দাস তাকে মৃত ঘোষণা করে। মৃত অবস্থায়ই তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল।’
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জাহান বলেন, ‘সন্ধ্যা সাতটার দিকে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে র্যাব হেফাজতে থাকা নারী আসামি সুরাইয়া বেগমের মরদেহের সুরতহাল পরিতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন আসার পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।’
এ বিষয়ে জানতে ভৈরব র্যাব ক্যাম্পে যোগাযোগ করলে সংশ্লিষ্ট কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।