স্বর্ণের খোঁজে দিন-রাত মাটি খুঁড়ছেন হাজারো মানুষ!
মাটি খুঁড়ে পাওয়া যাচ্ছে স্বর্ণ- এমন আজগুবি খবরে ঠাকুরগাঁওয়ের একটি ইট-ভাটায় প্রায় মাসখানেক ধরে ভিড় করছেন আশপাশের কয়েকটি এলাকার মানুষ। দল বেঁধে তারা ভাটার মাটি খুঁড়ে খুঁজছেন স্বর্ণ। যদিও ভাটা কর্তৃপক্ষসহ পুলিশ প্রশাসন বলছে, মাটি খুঁড়ে স্বর্ণ পাওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি ভিত্তিহীন, গুজব। এমন গুজব সৃষ্টিকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
গভীর রাত থেকে বিভিন্ন বয়সের হাজার হাজার মানুষ কেউ কোদাল, কেউ বসিলা, কেউ খুন্তি নিয়ে স্বর্ণের খোঁজে মাটি খনন করতে শুরু করে। ওই ইট ভাটায় ভাগ্য বদলের আশায় দিন-রাত চলছে যেন মাটি খনন প্রতিযোগিতা। রাতে দূর থেকে টর্চের আলোয় আরবিবি ইট ভাটা দেখলে আলোকিত পাহাড় বলেই মনে হবে। রাতের আঁধারে টর্চের আলোতেই চলছে মাটি খননের কাজ।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার কাতিহার আরবিবি ইট ভাটায় গত বেশ কিছু দিন ধরে স্বর্ণের খোঁজে খনন প্রতিযোগিতা চলছে। গ্রামের বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ বাড়ি হতে কোদাল-বসিলা নিয়ে ওই ভাটায় ভিড় করছেন দলে দলে। তাদের মধ্যে শ্রমিক শ্রেণির মানুষই বেশি। সোনা পেলে নিজেদের ভাগ্য বদল হবে এই আশায় কেউ বসে নেই। আশপাশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকেও ছোটখাটো যানবাহন নিয়ে স্বর্ণের সন্ধানে ভাগ্য বদলের জন্য ছুটে এসেছেন নানান পেশার মানুষ। আবার নিরাশ হয়েও ফিরছেন অনেকেই।
জানা গেছে, গত ১ মাস ধরে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার কাতিহার হাটের আরবিবি ইট-ভাটায় ভিড় করছেন আশপাশের কয়েকটি এলাকার মানুষ। তাদের ভাষ্য, এখান থেকে নাকি অনেকেই স্বর্ণ পেয়েছেন, তাই তারাও খুঁজতে এসেছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, এই ইট-ভাটার মাটি নাকি রাণীশংকৈলের রাজা টংকনাথের রাজবাড়ীর পাশ থেকে কেটে আনা হয়েছে। তাই রাজার পুঁতে রাখা গুপ্তধনও এই মাটির সঙ্গে চলে এসেছে। এমন বিশ্বাস থেকে তারা মাটি খুঁড়ছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, এখানে স্বর্ণের কয়েন পাওয়া যাচ্ছে। তবে সবাই লোকমুখে শোনা কথাতেই ওই ইট-ভাটায় এসে মাটি খুঁড়ছেন।
জানা যায়, শত শত লোক রাত-দিন মাটি খুঁড়ছেন স্বর্ণ পাওয়ার আশায়। তাদের মধ্যে নজরুল ইসলাম নামে একজন দাবি করেন, আমি ১৫ দিন ধরে মাটি খুঁড়ছি। আজ ছোট্ট একটা স্বর্ণের চেইন পেয়ে ভালো লাগছে। তবে সেটি হাতে নিয়ে এলেই স্বর্ণ কিনা তা পরখ করে দেখতে চাইলে অস্বীকৃতি জানান তিনি। এ ক্ষেত্রে অনেকেই দাবি করছেন, পুলিশ এসে খুঁজে পাওয়া স্বর্ণ নিয়ে যাবে- এই ভয়ে যারা স্বর্ণ পেয়েছেন তারা নাম প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না। তবে ভাটার ম্যানেজার লিটন বলেন, স্বর্ণ পাওয়ার বিষয়টি গুজব। স্বর্ণ পাওয়া গেলে আমরা নিজেরাই খুঁজতাম বা আমাদের এখানে কর্মরত যারা শ্রমিক রয়েছেন, তারাও খুঁজতো। এখানে যারা স্বর্ণ খুঁজতে আসছে তারা সবাই বাইরের লোক।
এ বিষয়ে কথা হলে রাণীশংকৈল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সোহেল রানা বলেন, বিষয়টি শুনেছি। এটা সম্পূর্ণ গুজব। প্রকৃত গুজব সৃষ্টিকারীদের পাওয়া গেলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।